ভুতেরা আমাদের মতই নিজস্ব সমাজ নিয়ে বসবাস করে। ইদানীং ভূতদের সমাজে
অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল। বয়স্ক ভূতদের ধারণা পাজি টাইপের ছেলে-মেয়েদের ঘাড়ে
অল্প বয়সী ভূতেরা চেপে বসাতে এই অবস্থা। সেই ছেলে-মেয়েগুলির বিভিন্ন কর্মকান্ড
তাদেরও প্রভাবিত করছে। আর এতেই হয়েছে বিপত্তি।
গ্রামের উঠতি নেতা ছেনু মিয়ার ইঁচড়ে পাকা ছেলে গেদু মিয়ার ঘাড়েই চেপে
বসেছিল বাচ্চা ভূত। প্রথম প্রথম সে গেদু মিয়ার ঘোর বিরোধী ছিল। কিন্তু ইদানিং সে
উল্টো গেদুর অনুসরন করে। আর এ নিয়ে প্রায় দিনই বাচ্চা ভূতের সাথে তার দুসম্পর্কের
বড় ভাই কাচ্চা ভূতের সাথে লেগে থাকত।
গেদু মিয়া ঘটা করেই নিজের জম্মদিন পালন করেছিল, আর বাচ্চা ভূতও তার
সাথে মজেছিল। রাতভর জম্মদিনের আনন্দ ফূর্তি করে বাচ্চা ভূত বিকেলে এল কাচ্চা ভূতকে
খোঁচা দিতে। কাচ্চাও কমে যায়না। সেও প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল। বাচ্চা ভূত কাচ্চা
ভূতকে দেখে দূর থেকে বেশ জোর গলায় বলতে লাগল, “আহ, কাল রাত্রে জম্মদিনের কী
পার্টিটাই না দিলাম”।
একথা শুনে কাচ্চার গায়ে জ্বালা করল, কিন্তু সে দমলনা। সেও বলতে লাগল,
“পার্টি না ছাই, কপাল গুনে অমাবশ্যা রাইতে জম্মদিন পাইছিলি। আর সেই সুযোগে ছেনু
মিয়ার পুকুরের মাছ সাবাড় করছত। আর এখন খুব বড় গলায় বলতাছত ‘পার্টি দিছি’। সারা
জীবন তো মাছ খাওয়ার লাইগ্যা আমার পিছে পিছে ঘুরতি”।
বাচ্চা ভূতঃ চিন্তা কইরো না,
তুমার লাইগ্যা দুই চাইরটা অবশিষ্ট আছে।
কাচ্চা ভূতঃ না খাইয়া থাকুম,
তাও তোর ধরা মাছ আমি নিমুনা্, খামুনা।
বাচ্চা ভূতঃ না খাইলে নাই,
আমার মাছ খাওনের অনেক ভূত আছে। আমি ফা-চল্লিশের কাছে যাইতাছি। (ফা-চল্লিশ বাচ্চা
ভূতের সমবয়সী মেয়ে ভূত। ইদানীং তার সাথে সে খুব ভাব দেখায়)
কাচ্চা ভূতের বিকেলের নাশতা করা হয়নি। সে ভাবল এমন ফ্রি মওকা কি
বারবার আসে! তাই পেছন থেকে বাচ্চাকে ডাকল, “আরে যাবি যা, তোর এই চুনো পুঁটি কে
খায়? তাও ছেনুর পুকুরের”।
![]() |
Child Ghost |
বাচ্চা ভূতঃ তোমার মত চুনো
পুঁটি আমি খাইনা, আমিতো তেলাপিয়া খাই।
কাচ্চা ভূত বাচ্চাকে প্রশংসা করে বলল, “হু, তুই বুঝি মস্ত শিকারী হয়ে
গেছিস রে। দেখি তো তেলাপিয়া মাছগুলো কত্ত বড়”।
নিজের প্রশংসা শুনে বাচ্চা খুশিতে গদ গদ হয়ে গেল। সে কাচ্চার কাছে এসে
একে একে তার মাছ দেখাতে লাগল। কাচ্চা প্রথমে খুব খুশি হল। কিন্তু পরমূহুর্তে মন
খারাপ হয়ে গেল। মাছগুলো সবই আধা খাওয়া। বাচ্চা ইচ্ছে করেই এমন করেছে, যাতে কেউ না
খায়। কিন্তু কাচ্চা হাড়বার পাত্র নয়। সে কিছু না বলেই একটা মাছ খেতে শুরু করল। এ
অবস্থা দেখে বাচ্চা ভূতের দুঃখে বুক ফেটে যাবার উপক্রম। তার কৌশল কাজে দেয়নি। সে
কাচ্চা কে কিছু বলতে পারছেনা। কিন্তু সামান্য সময়ের মধ্যে খোঁচা দেবার কৌশল বের
করে ফেলল। সে মুখ ভেংচিয়ে বলল, “আমাদের জম্মদিনের খাবার তো খাইলা, তয় কাচ্চা ভাই,
তোমার কিছলু ভাইয়ের জম্মদিন কবে? পার্টি টার্টি দিবানা”? (কিছলুর উপর কাচ্চা ভড়
করেছিল)
বাচ্চা ভূত জানত কিছলুর জম্মদিন সে নিজেই জানেনা, আর কাচ্চা তো দুরের
কথা। তাই একটা কঠিন খোঁচা দেয়া গেল। কাচ্চা ভূতের ততক্ষণে খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সে
জানে এর উত্তর নেই। কিন্তু সে কি দমবার পাত্র। সে খুব জ্ঞানী মানুষের মত বলে উঠল,
“আরে তোগ জম্মদিন আর আমাগো। কত্ত তফাত! আমাগো সময়ের ছেলে মেয়েরা মায়ের কাছে নিজের
জম্মদিন জিজ্ঞেস করলে তাদের মা বলে, ‘হ্যাঁ গো কিছলুর বাপ, আমাগো কিছলু আষাঢ় মাসের
শেষ সপ্তাহে হইছিল না?’ আর তোগ জম্মদিন। গেদু হওয়ার পাঁচ মাস আগেই ডাক্তারে জম্ম
তারিখ সময় সহ কইয়া দিছে। ডাক্তারে যেন আগের তনেই জানে গেদুর মারে অমুখ তারিখে
সিজার কইরা গেদুরে বাইর করব”।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন