একদা কাকেরা তাদের বাচ্চাদের শিক্ষা
দেবার জন্য মানুষের অনুকরণে পাঠশালা খুলল। রসুল পুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বট
গাছে সে পাঠশালার নাম দেয়া হল, ‘কা-পাঠশালা’। কাকেরা সকলে মিলে ঠিক করল, যেদিন আকাশের সূর্য
সাদা মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকবে সেদিন থেকেই তাদের কা-পাঠশালার পাঠদান শুরু হবে।
এক দিন ঠিকই তাদের সেই দিনটি আসল, তাই
সকাল না হতেই সম্ভাব্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কাকদের কা-কা ধ্বনিতে কবি কাকের বাড়ির
চারপাশ মুখর হয়ে গেল। তাদের কা-পাঠশালার প্রধান
পণ্ডিত হিসেবে কা-পাঠশালার উদ্যোক্তা কবি কাক, সঙ্গীত ও ভাষা শিক্ষা বিষয়ে কণ্ঠী
কাক, ধর্ম বিষয়ে নিমাই কাক ও ভ্রমণ বিষয়ে ছোটকু কাক দায়িত্ব পেল। সকাল বেলায় সকলেই
উপস্থিত থাকলেও নিমাই কাকের দেখা নেই।
নিমাই কাক বরাবরই একটু আলসে প্রকৃতির। প্রতিদিনের
মত আজও তার ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হল। মেঘে সূর্য ঢেকে থাকাতে সে মনে করেছিল সূর্যই
উঠেনি। কিন্তু কবি কাক নাছোড় বান্দা। তাকে সে কা-পাঠশালাতে নিয়ে যাবেই যাবে। এদিকে
নিমাই কবি কাকের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকল। ঘুম তাকে ছেড়ে দিলেও সে
ঘুমকে ছাড়তে নারাজ। আস্তে আস্তে সকল কা-পাঠশালার সঙ্গে জড়িত কাকেরা নিমাই কাকের
বাড়িতে এসে হাজির হল। নিমাই কাক ভাবল এবার আর তার ঘাপটি মেরে বসে থাকা চলবেনা। সে
পাঠশালার দায়িত্ব না নিলে কাক সমাজে তার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। তাই সে ঢুলতে ঢুলতে
বাইরে বেড়িয়ে এসে বলল, “কি হইছেরে?”
কাক সমাজের এত বড় একটা ব্যপার কিন্তু সে মাথাই
ঘামাচ্ছে না। তাই সকলের রাগ হল, কিন্তু মুরুব্বি বলে কেউ কিছু
বললনা। কিন্তু শ্যামল কাক একটু হুজুগে প্রকৃতির ছিল। সে বলেই ফেলল, “ দেখছেননা কি
হইছে? আপনার মত দিনের বেলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাকাল ফল খাওয়ার স্বপ্ন দেখলে কি কাকদের
দিন যাবে?” নিমাই কাক চারদিকে চেয়ে দেখল কার এত সাহস। তবে সে নিরুত্তর রইল।
মানুষের পাঠশালা শুরু হবার আগেই কাকেরা তাদের
শিক্ষাদান শুরু করল। কিন্তু আশ্চর্য ব্যপার, অতি মাত্রায় কোলাহল প্রিয় বাচ্চা
কাকেরা একেবারেই শান্ত হয়ে রইল। অন্যদিকে শান্তি প্রিয় মানুষের বাচ্চারা ক্লাসে
ঢুকেই চিৎকার জুড়ে দিল। কাকেরা ভাবল, এই জায়গাতে তাদের বাচ্চাদের জয় হয়েছে। এরা
মানুষের বাচ্চাদের মত বেয়াদব না।
কণ্ঠী কাক তার ছাত্রদের মনোযোগের সাথে কা-সঙ্গীত
শেখাচ্ছিল। তার ছাত্ররা তার সাথে সাথে সুর তুলে কা-কা, কাও-কাও সুরে গান গাচ্ছিল।
কিন্তু কন্ঠীর বেজন্মা বাচ্চা কোকিল কাক কিছুতেই সুর মেলাতে পারছিলনা। নিজের
সন্তানের এইরূপ অবস্থা দেখে কন্ঠীর মাথা হেট হয়ে গেল।
ভর দুপুরে কাকেরা তাদের পাঠদান শেষ করল। এবার
ছোটকু কাক নির্বাচিত পাঁচ জন বাচ্চা কাক নিয়ে মানুষের পাঠশালায় ঢুকল তাদের পড়া
চুরি করতে। কিন্তু সকল কে অবাক করেই ছোটকু মাত্র দশ মিনিটের মাথায় বের হয়ে এলো। এতে কবি কাক
বিরক্ত হয়ে এর
কৈফিয়ত চাইল। ছোটকু রেগে গিয়ে বলল, “মানুষের পড়া চুরি করার আর কিছু নেই, আমি যেয়ে
দেখি ওদের বাচ্চাদের ‘হাট্টি মাটিম টিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম’ জাতীয় কবিতা পড়াচ্ছে।
আমি বলি, এই কবিতার কি কোন অর্থ আছে না এতে কিছু শিখবার আছে। তার চেয়ে বরং আমাদের
কবি কাকের কবিতাই অনেক ভাল”।
ছোটকু কাকের কথায় অন্যরা সায় দিল। নিমাই কাক মাথা
নেড়ে বলল, “তাই তো বলি মানুষের বাচ্চারা সারাদিন লেখাপড়া শিইখ্যা পাঠশালা থেকে বের
হইয়াই আমার বাসার দিকে ঢিল ছুড়ে ক্যান!”
সকলেই মাথা নাড়িয়া কহিল নিমাই কাক ঠিক কথাই
বলিয়াছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন