This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

ভাই মশা খাওয়া যায়না?

উৎসর্গঃ এদেশের রাজনীতিবিদদের

চৌরাস্তার মাথায় মস্ত বড় বট গাছটির নিচে সুমন পাগলের বাস। সারাদিন সে ঘুমিয়ে কাটায় আর রাতে চিৎকার চেঁচামেচি করে শব্দ দূষণ করে। আসে পাশে অবশ্য খুব একটা বাড়ি ঘর নেই। কয়েকটা দোকান সেখানে আছে। হাতে গোনা কিছু রিক্সাওয়ালা ভিড় জমায় গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেবার জন্যসুমন পাগল এই রিকশাওয়ালাদের সাথেই বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরেকারণ তার সন্দেহ এরাই একদিন তাকে এখান থেকে উৎখাত করবে। মাঝে মধ্যেই এলাকার নতুন উঠতি নেতা আদেবর এই ব্যপারটা নিয়ে রিকশাওয়ালাদের গাল মন্দ করত। এই এলাকায় সুমন পাগলের আপনজন বলে মনে হত শুধু আদেবরকেই। সুমনের অন্যান্য আত্মীয়রা তার ধারে কাছেই ঘেঁষতে চাইত না। পাগল মানুষের দায়িত্ব কেউ নিতে রাজি ছিলনা। রিকশাওয়ালারাও তার ব্যপারগুলোয় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারাও এখন মনে করে, পাগল মানুষ চেঁচামেচি করে তো করুক। তার কথায় আর কান দেয়ার দরকার নাই।

সুমন পাগলের আরও শত্রু আছে। এরা তার চারপাশেই বাস করে। দিনের বেলায় শত্রু মশাদের উৎপাত কম থাকলেও রাতের বেলায় এরা তাকে পাইকারি খাবারের উৎস মনে করে। মূলত মশাদের অত্যাচারেই সে রাতের বেলায় ঘুমাতে পারেনা। আর সময় কাটানোর জন্যই রাত ভর চিৎকার চেঁচামেচি করে। কান্না কাটি করার সময় যে কথাগুলো সে বলে তা মূলত তার অতীতের হারানোর গল্পকারণ স্মৃতির মশারা তার হৃদপিণ্ডকে কুড়ে কুড়ে খায়। সুমন পাগলের মন ভাল থাকলে, বট গাছের তলায় কাউকে দেখতে পেলে শরীরের উপর রক্তপান করতে থাকা কোন মশার
bangla-fiction-story
উপরে বেশ জোড়ে শব্দসহ চপেটাঘাত করে মরা মশা হাতে নিয়ে বলে, “ভাই মশা খাওয়া যায়না?”

সুমনও একসময় সুখী ও সুস্থ মানুষ ছিল। তার পরিবার ছিল, ছোট্ট একটি ভিটা জমি ছিল। সেখানে সে শিম, লাউ, কুমড়া ও অন্য বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করত। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে পেঁপে আর কলাগাছের বাগান করেছিল। অল্প রোজগারেই সে সুখী ছিল তার ছোট্ট মেয়ে আলেয়া আর স্ত্রী হাসনাকে নিয়ে। আস্তে আস্তে ঋণের টাকাও শোধ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তাকে সুখী দেখতে ভাল লাগছিলনা কিছু মানুষের। তাদের মধ্যে সে সময়ের এলাকার উঠতি রাজনৈতিক নেতা রাজন তাকে প্রায়ই হুমকি ধমকি দিত। কারণ ইটের ভাটা করতে যেয়ে সুমনের ভিটা জমিটা একেবারে দরকারি হয়ে পড়েছিল তারসুমনের একমাত্র উপার্জনের সম্বল ছিল সেটাএর পাশাপাশি রাজন যে দাম দিতে চাইছিল তা আসল মূল্যের অর্ধেকও না। সুমন বেশ রাগী ছিল। ভয়তো সে পেতই না বরং উল্টো আরও হাঙ্গামা বাধিয়ে বসত। সব কিছু মিলিয়েই জমি নিয়ে সুমন ও রাজনের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেএলাকায় লোক মুখে সেটা খুব শোনা যেতে থাকে।

মূল ঘটনার শুরু হয় পৌষ মাসের এক রাতে। তখন সুমনের জমিতে শিম আর লাউয়ের ফলন দেখবার মত ছিল। পেঁপে আর কলা গাছগুলোতেও ফলন ছিল বেশ। কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকা থেকে পাইকারেরা আসবে। সুমন সেদিন সারাক্ষণ বেশ খোশ মেজাজে ছিল। এবারের চালানটা দিতে পাড়লেই সে এনজিওর ঋণের টাকা শোধ করে ফেলবে। আর ঝামেলা বলতে বাকি থাকবে শুধু রাজন। রাজনকে সামলানোর কাজটাও সে করে ফেলেছে আজ। দিনকে দিন এলাকায় রাজনের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছিল। তার পক্ষের রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগেই একরকম হেরে গিয়েছিল। আর এই সুযোগে সুমন অপর পক্ষের নেতা আদেবরের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছিল। আদেবরকে সে সব খুলে বলেছিল। সে সুমনকে জমি রক্ষার ব্যপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। তাই সুমন সেদিন নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে থাকল।

মাঝরাতে হঠাৎ করেই সুমনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাড়ির বেশ কাছেই সুমনের ফসলের জমি। সেখান থেকে ধপাস ধপাস করে আওয়াজ আসতে শুরু করল। সুমন প্রথমে আন্দাজ করতে পারছিল না কি থেকে এমন আওয়াজ আসছে? কিছুক্ষণ পরেই সে বুঝতে পারল ঘটনা যাই হউক, যা কিছুই হচ্ছে তার জমিতেই হচ্ছে। সুমন ধর ফরিয়ে উঠে চিৎকার করতে করতে বাইরে বের হয়ে এলোচিৎকার শুনে অপকর্মকারীরা জমি থেকে বের হয়ে দৌড়াতে শুরু করেছে। সুমন একা সেখানে পৌছাতে পৌছাতে একজনকেও পেলনা। কিন্তু যা হবার তা হয়েই গেছে। সুমনের একটি গাছও অক্ষত নাই। প্রায় সব পেঁপে আর কলা গাছই মাটিতে পরে আছে। শিম আর লাউয়ের গাছের গোরাও কাটা। অর্থাৎ আর কিছু অবশিষ্ট রেখে যায়নি সুমন এই মাঝ রাতেই গাছগুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরে গগনবিদারী চিৎকার করতে থাকল। তার চিৎকারে শুধু তার পরিবারের লোকজনই সেখানে জড়ো হলনা, এই শীতের রাতে ঘুমকে বিদায় দিয়ে আসে পাশের অনেকেই সেখানে হাযির হল। কিন্তু তখন আর কারো কিছু করার ছিল না। এই কান্নার মাঝেই কেউ সুমন কেউ উসকে দিল। কেউ এই অপরাধের সাথে রাজনের জড়িত থাকবার কথা বলল। এই কথা কানে যাবার সাথে সাথেই সুমনের কান্না থেমে গেল। হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়েই নিজ ঘরের দিকে দৌড় দিল। ঘর থেকে তার বেরুবোর পরেই সবাই দেখতে পেল বদরাগী সুমন বিশাল এক রামদা নিয়ে দৌড়ে কোথাও যাচ্ছে। পেছন থেকে তার স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনেরা ডাকতে থাকল। কে শোনে কার কথা? সুমন আজই রাজনের দফারফা করে ছাড়বে। লোকেরা সুমনের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে রাজনের বাড়ির সামনে এসে থামল। সবাই দেখল সুমন রাজনের বাড়ির লোহার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে লোহার গেইটকে রামদা দিয়ে ইচ্ছে রকম কোপাচ্ছে আর বলছে, “ঐ হারামজাদা রতইন্যা, বাইর হ’। আকাম কইরা পলাইয়া রইছত ক্যান? আমার গাছ কাইট্ট্যা যেমন মাটিতে নামাইছত, তেমনে আমিও আইজক্যা তোর কল্লা কাইট্টা মাটিতে নামাইয়া দিমু”।

রাজনও কম যায়না। রাত ভর কেউ কাউকে ছাড়লনা। রাজন গাছ কাটার অপরাধ বরাবরই অস্বীকার করতে থাকল। অবশেষে শেষ রাতে এলাকার মুরুব্বিরা এসে সালিশ করবে বলে তাদেরকে চুপ করালো। এর পরের ঘটনা খুব দ্রুতই ঘটতে থাকল। সকালে সুমন আবার তার জমিতে গেল। সারা রাত ঘুমায় নি সে। চোখ লাল হয়ে আছে। কান্না এখনো থামেনি। সে সারা ক্ষেত জুড়ে দেখতে থাকল কোন গাছ তাদের চোখ এড়িয়েছে কিনা? খুঁজতে খুঁজতেই জমি থেকে রাস্তার যাবার দিকটায় সে একটা ব্রেসলেট খুঁজে পেল। সাথে সাথেই সে সেটি লুকালো। সে বুঝল দৌড়ে পালিয়ে যাবার সময় সেটা হাত থেকে খুলে পড়েছে। জিনিসটি তার কাছে বেশ পরিচিতও মনে হল। কার হাতে এটি দেখেছে তা মনে করতে পারলনা। বাড়িতে স্ত্রীর কাছে নিয়ে যাবার পর বুঝল ব্রেসলেটটি হোয়াইট গোল্ডের তৌড়ি। এর অনুমিত দাম নেহাত কম নয়। সুমন যেন এই ঘটনার পরে সান্ত্বনার উপকরণ পেল। কিন্তু বাইরে সেই রাগত ভাব ঠিকই রাখল। বিকেলে যথারীতি বিচার হল। বিচারে রাজন নির্দোষ প্রমাণিত হল।

সেদিন রাতেই ঘটনা আরও বেশি রহস্যময় হল। রাতে রাজনকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কে বা কারা তাকে খুন করল। কে খুন করেছে তা কেউ জানতোনা। সকালে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুনের দায়ে পুলিশ সুমনকে ধরে নিয়ে গেল। সেদিনই ঘটল আরও দুই দুইটি মর্মান্তিক ঘটনা। যেই এনজিওর কাছ থেকে সুমন ঋণ নিয়েছিল তারা হন্য হয়ে ঋণের টাকা চাইতে লাগল। সুমনের স্ত্রীর টাকা দেবার সামর্থ্য ছিলনা। কিন্তু এনজিও নাছোড়বান্দা। তারা জানে এই ধাক্কায় টাকায় আদায় না হলে আর কখনোই টাকা তারা ফেরত পাবেনা। অবশেষে তারা বাড়ির ফ্যান, টিভি সহ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র খুলে নিয়ে গেল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মসজিদের ঈমাম সাহেব দুপুরের নামাজের পর এনজিও বিরোধী বক্তব্য দিয়ে মুসল্লিদের রক্ত গরম করে ফেললেন। তাদের নিয়ে এনজিও অফিস ঘেরাও করলেন। অন্যদিকে সুযোগ বুঝে অজানা দুর্বিত্তকারীরা সুমনের স্ত্রী ও মেয়েকে ঘরে আটকে তাদের সহ পুরো ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিল। অবশিষ্ট ঘরগুলোতে ভাঙ্গচুর করল। পুরুষ লোকদের অভাবে আসে পাশের মহিলারা আগুন নেভাতে পারলনা। বিকেলেই সুমনের স্ত্রী ও মেয়ের পোড়া লাশ বাইরে বের করা হল। পুলিশ এলোসুমনের স্ত্রী ও মেয়েকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে সেই মিছিলকারীদের মধ্যে নেতা গোছের কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেল। আর হতভাগ্য সুমন স্ত্রী ও কন্যার মৃত্যু শোক এবং পুলিশের মার সহ্য করতে না পেরে কয়েক দিনের মধ্যেই পাগল হয়ে গেল।

সেই থেকে আজ অবধি সুমন পাগল। পুলিশ তার কাছে এখন আর আসেনা। পাগলের বিচার নাই। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরেই সুমনের পরিবর্তনের ধারা লক্ষ করল রিকশাওয়ালারা। সে এখন তাদের সাথে বেশ খোশ গল্প করে আবার পাগলামোও করে। খাবার সাধলেই এক সাথে খাবার খায়। এভাবেই সুমন আস্তে আস্তে ভালোর দিকে এগুচ্ছিল। তবে এই কথা রিকশাওয়ালারা ছাড়া কেউ জানতোনা।

এমনই একদিন আদেবর তার সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে সুমনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সুমন বেশ মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিল। পাগল খবরের কাগজ  পড়ছে, তাই হাসির খোরাক ভেবে আদেবর সুমনের কাছে এসে দাঁড়াল। কিন্তু সুমন ততক্ষণে পড়া বাদ দিয়ে আদেবরের হাতের ব্রেসলেটের দিকে খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আদেবর ব্যাপারটি বুঝতে পেরে চলে যেতে লাগল। ঠিক তখনই সুমন শব্দসহ থাপ্পড় মেরে একটা মশা  মেরে আদেবরের দিকে এগিয়ে এসে বলল, “ভাই মশা খাওয়া যায়না, আমি মশা খাইতে চাই”। আদেবরকে বেশ ভীত দেখাল, সে কিছু না বলেই চলে গেল। 

এই ঘটনার দুই দিন পরে সুমন পাগলকে আর সেই বট গাছের তলায় দেখা গেলনা। যারা গত এক বছর ধরে তাকে সেখানে দেখে আসছিল, তারা সেখানে সুমনকে না পেয়ে নানা কথা বলাবলি শুরু করল। কেউ কেউ বলতে লাগল পাগলাটাকে শেয়ালে খেয়ে ফেলেছে। ঘটনা আদেবরের কানেও গেছে। সে সকালে ঘুম থেকে উঠেই তার বাড়ির বারান্দার দিকে গেল। সকালে খবরের কাগজওয়ালা কাগজ ফেলে রেখে যাবার কথা। আজ স্থানীয় খবরের কাগজে তার ফুলের মালা গলায় দেয়া ছবি ছাপাবার কথা। কারণ সে দলের ইউনিয়ন পর্যায়ে সভাপতি হয়েছে। বারান্দায় এসেই খবরের কাগজ হাতে নিলোআগেই কে যেন এটিকে দুমড়ে মুচড়ে রেখেছে। আদেবর মনে মনে গালি দিল অজানা ব্যক্তিটিকে। এরপর সে বেশ উৎসাহের সাথে খবরের কাগজের প্রথম পাতা খুলল। প্রথম পাতায় নিজের ছবির দিকে চেয়ে একটু চমকেই গেল। কে যেন ছবির উপরে রক্ত মেখে রেখেছে। একটু ভাল করে দেখে বুঝতে পাড়ল কেউ রক্ত খাওয়া মশা মেরে সেগুলো টিপে টিপে অস্পষ্টভাবে তার ছবির উপরে লিখে রেখেছে, “ভাই মশা খাওয়া যায় না? রক্ত খাওয়া মশা?”    


Share:

কোন মন্তব্য নেই:

পৃষ্ঠাসমূহ

Popular

Translate

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

Like Us