This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

ভৌতিক গল্পঃ অন্ধকারে কে?



 সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার পর থেকে বাবলা গাছের পাতাগুলো একটুকুও নড়ছেনা। পুরো পরিবেশটাই কেমন যেন গুমট অন্ধকারে ঢেকে আছে। বিকেল যে এত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে যাবে তা তপু একেবারেই টের পায়নি। শুধু তপু কেন, ওর সাথে থাকা আশিক, শহিদ, জাকির সবাই এতে একটু আশ্চর্য হয়েছে। এমন অসময়ে ঝড় নামবে তা কেউ মেনে নিতে পারেনি। সবে মাত্র ক্রিকেট ম্যাচটা জমে উঠেছে। কিন্তু কী করবে! পরিবেশের সাথে তো আর যুদ্ধ করা যায়না। পারলে আজকে ওরা তাই করত। হঠাৎ খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওরা সকলেই নিশ্চুপে মাঠের ধারে বসে আছে একটা নির্মাণাধীন বাড়ির পাশে।

দমকা বাতাস হয়ে ঝড় নামতে শুরু করল। কিন্তু ওরা বাড়ি যাবার একটুকুও চেষ্টা করলনা। তপুর বাড়ি নিকটেই। তার মা তাকে ডাকছে। কিন্তু তপু ভাবল, সে চলে গেলে তার বন্ধুরা যদি তাকে কাপুরুষ বলে। তাই সে বাড়ি না যেয়ে নির্মাণাধীন বাড়িটায় যেয়ে ঢুকল। বাকিরা ঝড় থেকে বাঁচতে আগেই ভেতরে বসে ছিল। বাড়িটার ভেতরে তপু ওর বন্ধুদের সাথে মিলিত হবার সাথে সাথেই বাইরে প্রচণ্ড বেগে ঝড় শুরু হল। ঝড়ের আওয়াজে এখন আর তপুর মায়ের কণ্ঠও শুনতে পাওয়া যাচ্ছেনা। নির্মাণাধীন বাড়িটির কপাট বিহীন জানালা দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বাতাস ঢুকছে। ওরা যতটা সম্ভব নিজেদের বাতাস থেকে আড়াল করে যাচ্ছে।

একটা সময় ওদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হল। বাড়ির ছাদ এখনো অপরিণত। টুপ টাপ পানি পড়ছে নিচে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ওরা কেউ শুকনো থাকলো না। সবাই ভিজে একাকার। এই ঝড়ের মাঝে বাইরে বেড়িয়ে তপুদের বাড়িতে যাবার সাহস হচ্ছেনা কারোই। তাই সবাই মিলে এমন একটা জায়গা খুঁজছিল যেখানে পানি থেকে বাঁচা যায়। এক সময় নিরাপদ একটি ঘর পেয়েও গেল। এই ঘরটিতে বাড়ি বানানোর বিভিন্ন উপকরণ রাখা হয়েছিল। রাজমিস্ত্রিদের রেখে যাওয়া নোংরা চেয়ার ও টেবিলের উপরে সবাই বসলো। টেবিলের পেছনেই নানা ভাঙ্গা জিনিসের স্তূপ। অন্ধকার হলেও সেটা আন্দাজ করতে পারছিল ওরা।

বাইরে ঝড়ের প্রকোপ থাকলেও ভেতরে ওরা সবাই খোশ গল্পে মেতে উঠল। অন্ধকারে ওদের ভূতের গল্পগুলো নিজেদেরই চমকে দিচ্ছিল। শহিদের গল্পগুলোই ওদের বেশ ভয় পাইয়ে দিচ্ছিল। বিশেষ করে তপুকে। ওরা যখন গল্পের মধ্যে জমে গেছে, এমন সময় হঠাৎ করেই ওদের পেছন থেকে নতুন কিছুর অস্তিত্ব টের পেল। একটা ভাঙ্গা স্তূপের মধ্যে থেকে কেউ নড়ে উঠল। ব্যাপারটা এক্কেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। তাই প্রথমে ওরা সবাই ভয় পেয়ে গেল। পর মূহুর্তে ভাবল বিড়াল হবে হয়ত। ওদের দেখে ভয় পাচ্ছে। কয়েক মুহুর্ত পরে ওটা আবার নড়তে শুরু করলেই ওরা বুঝতে পাড়ল এটা বিড়াল না। তার চাইতে অনেক বড় কিছু। এবার ওরা ভয়ে যে যার স্থান থেকে উঠে দাঁড়াল। ওদের আর কারোই সেখানে থাকার সাহস হচ্ছিলো না। তাই পড়িমরি করে ছুট দিল। তাড়াহুড়ো করতে যেয়েই তপু ওদের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। সবাই বের হয়ে গেলেও তপু একাই ঘরের ভেতরে রয়ে গেল। সে কোন রকমে উঠে দৌড় দিতে যাবে, ঠিক তখনি কেউ ওর পা চেপে ধরল। তপু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে একটা চিৎকার দিল। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুটতে চাইল। কিন্তু সেই অগান্তুকের হাত থেকে মুক্ত হতে পাড়লনা। তাই প্রাণ বাঁচাতে হাতে থাকা ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে অগান্তুককে লক্ষ করে জোড়ে আঘাত করল। তবুও ওটা কিছুতেই ওকে ছাড়ছিলোনা। সে আবারো চিৎকার করতে গিয়ে মূর্ছা গেল। চৌদ্দ বছর বয়সী তপু আর কত সাহস দেখাতে পারে?

 আশিক, শহিদ আর জাকির বাইরে বেড়িয়ে এলেও তপুর দেখা নেই। তারা শুধু ওর একটা চিৎকার শুনেছিল। বাড়ির ভেতরে যেতে ভয় হচ্ছে ওদের। ঝড় একটুকুও থামেনি। ঝড় ভেঙ্গে কাছাকাছি শুধু তপুদের বাড়ি যাওয়া যায়। কিন্তু ওর মাকে কি জবাব দিবে। ততক্ষণে আশিক তপুর নাম ধরে ডাকতে শুরু করেছে। কিন্তু ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসছেনা। এবার ওরা আরও ভয় পেয়ে গেল। জাকির বলল, “ব্যাটা আমাদের ভয় দেখাচ্ছে নাতো, সবাই বের হয়ে এলাম আর ও একা......”। কথা শেষ হতে না হতেই বাড়ির ভেতর থেকে কারো চিৎকার শুনতে পেল। মনে হচ্ছে কেউ যেন ওদের শাসাচ্ছে। এবার আর কারোই সাহসে কুলালো না। সোজা দৌড় দিয়ে তপুদের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াল। দরজার দিকে তাকাতেই সবার মুখ কাঁচুমাচু হয়ে গেল। তপুর মা দরজায় দাঁড়িয়ে। ওদের দেখেই খেঁকিয়ে উঠল, “তপু কোথায়?”

ওরা কেউ কোন কথা বলতে সাহস পেলনা। সবাই নিশ্চুপ দেখে তপুর আম্মা আরও জোরে ধমক দিলেন, এতে সবাই আরও ঘাবড়ে গেল। কেউ কথা বলছেনা দেখে তপুর আম্মা নিজেই ঘাবড়ে গেলেন। অজনা ভয়ে তার শরীর কেঁপে উঠল। নরম গলায় বলল, “বাবারা আমার ছেলের কী হয়েছে বলনা?” এবারে শহিদ সাহস করে মুখ খুলল, একে একে সব বলল। শহিদের কথায় তপুর আম্মা আশ্বস্ত হলেন। তার মুখ থেকে ভয়ের ভাবটাও কেটে গেল। ওদের সবাইকে নিয়ে সেই বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন। ওরা একটু আশ্চর্য হল। এমন একটা ব্যপারে তিনি কাউকে না ডেকে একাই যাচ্ছেন সে বাড়িতে। আশিকদের কিছুই করার ছিলনা অনুসরণ করা ছাড়া। তপুর মায়ের হাতে লাইট ছিল। ওদের অন্ধকারের ভয় কেটে গেছে তাতে। সবাইকে আশ্চর্য করে তপুর মা একাই সেই নির্মাণাধীন বাড়িতে ঢুকল, কাউকে সাথে যেতে দিলনা। কয়েক সেকেন্ড পরেই ভেতর থেকে তপুর মায়ের চিৎকার আসল। সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখতে পেল তপু উপুড় হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। সবাই ধরাধরি করে ওকে বাইরে নিয়ে এলো।

বাইরে ঝড় থামলেও বৃষ্টি থামেনি। বৃষ্টির পানি তপুর চোখে মুখে পড়তেই ও জেগে উঠল। ওরা তিনজনেই আনন্দে হালকা চিৎকার দিয়ে উঠল। তপুর মা থাকাতে সেটা আর জোড়ে হবার সাহস পেলনা। তপুকে বাড়িতে নিয়ে যাবার কথা বলে তিনি নিজে আবার সেই বাড়িতে ঢুকলেন। আশিক উৎসাহী হয়ে তার পিছু নিলো। এক কোনায় দাঁড়িয়ে সে দেখল, তপুর মা হন্য হয়ে অন্য কিছু একটা খুঁজছে, কিন্তু কি খুঁজছে তা বোঝা গেলনা। আশিকের উপস্থিতি টের পেয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এলেন। আশিকের দিকে খুব রাগী ভাব নিয়ে চাইলেন। আশিক বাড়ি থেকে বেড় হতে গিয়ে একটি প্লাস্টিকের প্লেটের উপর পা তুলে দিল। নিচে চেয়ে দেখল, কেউ এই প্লেটে বিরিয়ানী খেয়েছে, তবে সবটুকু খেতে পারেনি। আজকে দুপুর বেলায় তপুদের বাড়ি থেকে এই জিনিসটার গন্ধ বেরুচ্ছিল। সাধারণ এই ব্যপার নিয়েই অনেক কিছু ভাবা যায়। কিন্তু এখন সে সময় নেই।

 তপুর চোখ দুটি অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে। ওর বিশ্রাম দরকার। ঝড় থামলে সবাই যে যার বাসায় চলে গেল। তপুর শান্তি প্রিয় বাবাটি ততক্ষণে চলে এসেছে। তপুকে নিয়ে ওর মা সবার অলক্ষ্যে নানা কথা জিজ্ঞেস করছে। যা যা হয়েছিল, তপু সব কথাই বলল। ওর মা সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। তপু যখনই বলল, ওর পা যে ধরেছিল তাকে সে জোরে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করেছে। অজ্ঞান হবার আগে সে অগান্তুকের চিৎকারও শুনেছিল। তপু ভেবেছিল এ কথায় তার মা খুব খুশি হবে, কিন্তু উল্টো তার গালে একটা থাপ্পড় পরল। তারপর তিনি কান্না লুকাতে অন্য ঘরে আড়াল হলেন। এখানে ওর কি ভুল হয়েছে তা সে বুঝতে পাড়লনা। তাই সে হতভম্বের মত বসে রইল।

 সকাল হতে না হতেই বাইরে লোকজনের চিৎকার, চেঁচামেচি শোনা গেল। তপু উৎসাহী হয়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখতে পেল, বেশ কিছু প্রতিবেশী একটা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লাশের পাশে দাঁড়িয়ে নানা রকম মন্তব্য করছে। কার লাশ? কিভাবে এখানে এলো? তা কেউ বলতে পারছেনা। তপু ওর মাকে খবর দিতে গিয়ে দেখল, ওর মা আগেই জানালার পাশ থেকে বাইরে চেয়ে দেখছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তপু মা’ বলে ডাকতেই তিনি ফিরে চাইলেন, আর চাপা ক্ষোভ নিয়ে শুধু বললেন, “তুই একটা খুনি”।

মায়ের মুখে এমন একটা অপবাদ শুনে অজানা অতঙ্কে তপুর বুকটা ধক্ করে উঠল। তপু ব্যপারটি নিশ্চিত হতে চায়। তাই সে বেশ চিন্তিত মনে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে এল। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলনা, কিভাবে এই লোকটিকে সে খুন করল? কেন তার মা তার উপর এত্ত বড় অপবাদ দিলেন?

 লোকটির শরীরে পোশাকের ধরণ আর চেহারায় চুল দাড়ির জটলা দেখে নিশ্চিত পাগল মনে হল। তপু বুঝতে পাড়ল, গতকাল ঝড়ের সময় যে অগান্তুক লোকটি অন্ধকারে ওর পা ধরেছিল সেই এই পাগল। কিন্তু সামান্য স্ট্যাম্পের এক শক্ত আঘাতে সে মারা গেল তা কী ভাবা যায়! লোকজনের মুখে শোনা গেল শেয়ালেরা পাগলের লাশটি টেনে বাইরে নিয়ে আসে। তপু নিজেকে খুনি ভেবে ভয় পেয়ে গেল। আবার এই ভেবে সান্ত্বনাও পেল, এ কথা ওর মা ছাড়া আর কাউকেই বলেনি। পাগলটি মারা যাবার পর তপুর মা কেমন যেন হয়ে গেছেন। উঠতে বসতে তপুকে ধমকাচ্ছেন আর কাঁদছেন। পাগলের জানাজায় শরীক হবার জন্য খুব তাগিদ দিলেন সবাইকে। তপু মনমরা হয়ে সব আদেশই পালন করতে লাগল।

 রাত একটা বাজে।
তপু আনমনে কারণে অকারণে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। মায়ের আদেশ, রাত দুইটার আগে ঘুমুতে যেতে পারবেনা। তপু বুঝতে পেরছে তার মা ইচ্ছে করেই এমন আদেশ দিয়েছেন। নয়তো রাত বারোটার বেশী জেগে থাকার অনুমতি নেই। তিনি ইচ্ছে করেই তপুকে শাস্তি দিচ্ছেন। তপুও মুখ বুজে শাস্তি মেনে নিচ্ছে। 

বাইরে গাঢ়ো অন্ধকার। দুরে শেয়ালগুলো একটানা ডেকে চলেছে। তপুর কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। বার বার সেই পাগল লোকটির কথা মনে হচ্ছে। লোকটিকে তার খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। নিজেকে খুনি ভেবে ভয় পাচ্ছে সে। ভয়ে সারা শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে আছে। পড়ার টেবিলের সামনে জানালা খোলা, হঠাৎ করেই বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। শুকনো মেঝের উপরে কারো খালি পায়ের আওয়াজ। আস্তে আস্তে আওয়াজের উৎসটা জানালার দিকে এগিয়ে আসছে। এত রাতে বাইরের বারান্দায় কেউ থাকবার কথা না। ভয়ে তপুর বুক ধক্ ধক্ করছে। জানালা লাগাবার সাহস হচ্ছেনা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেটি আরও কাছে চলে এলো, তপু ভাবছে এই বুঝি জানালার সামনে এসে যাবে সেটি। জানালার খুব কাছ থেকে পায়ের আওয়াজ আসতে লাগল, তারপর হঠাৎ করেই সেটি সামনে আসা বন্ধ করে দিল। ওর মনে হল পাশের ঘরে দরজা খোলার আওয়াজ হচ্ছে। বাবা মায়ের মধ্য থেকে কেউ বাইরে বের হচ্ছে মনে করে তপু সাহস পেল। বাইরে কে চুপিসারে দাড়িয়ে, তা দেখতেই তপু জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে দেখল। কিন্তু আশ্চর্য বাইরে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। একটু এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকেই খুঁজে পেলনা। এতে তপু বেশ ভয় পেয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে জানালা বন্ধ করতে যেয়ে বুকটা ধক্ করে উঠল। হঠাৎ করেই জানালার ঠিক সামনে কারো অস্তিত্ব টের পেল সে। তার মনে হল সেই মারা যাওয়া দাড়ি গোঁফওয়ালা পাগল লোকটির মত একটা ছায়া মূর্তি জানালার বাইরে ঠিক ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

 তপুর চিৎকারে ওর বাবা মা বাইরে বেরিয়ে আসল। ঘর ভেতর থেকে বন্ধ, তপু অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। তাই দরজা ভাঙ্গা ছাড়া আর কোন উপায় থাকলনা। প্রায় আধাঘন্টা চেষ্টার পর তপুর জ্ঞান ফিরল। জ্ঞান ফেরার পর সে যা যা দেখেছিল তার সবই ওর বাবা-মাকে বলল। তপুর বাবা সহজ সরল মানুষ, এ ব্যপারটাকে সাধারণ ব্যাখ্যা দিয়ে অবজ্ঞা করলেন। সব সময় তিনি এই কাজই করেন। কিন্তু তপু তার ব্যপারে সবসময় সরলতার অজুহাত মানতে নারাজ। সে যা দেখেছে তা সত্যি ভয়ের। এমনটা তার সাথে কক্ষনো হয়নি। তপুর কাছে ব্যপারটা ভয়ের হলেও ওর বাবা-মাকে তা বিশ্বাস করাতে পারছেনা। তপুর মা এককোণে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপে কাঁদছে। এর মধ্যে কাঁদার কি হল তা তপু বুঝতে পারলনা। সিদ্ধান্ত নিলো, এর মধ্যে সে আর মা বাবাকে জড়াবেনা। এটা নিয়ে শুধু বন্ধুদের সাথেই আলোচনা করবে।

 পরদিন স্কুলে ক্লাসের ফাঁকে অনেক ব্যপারেই আলোচনা হল আশিক ও শহিদের সাথে। মারা যাওয়া সেই পাগলের মাঝ রাতে তার ঘরের সামনে হাঁটাহাঁটি, সে ঘটনাকে বাবার সরল অবজ্ঞা, মায়ের অযথা কান্না, সবকিছুই বলল। শুধু বললনা স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাতের বিষয়টি। আশিকও তপুর মায়ের যে যে আচরণ দেখেছিল তা বলল। বাদ গেলনা বিরীয়ানির সাথে থাকা প্লাস্টিকের প্লেটের কথাও।

 বিকেলে খেলতে না যেয়ে চুপিসারে তপু আবার সেই বাড়িতে ঢুকল। পাগলের লাশ পাওয়া যাবার পর থেকে কেউ আর এইদিকে আসেনা। আশে পাশে তাই কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। তপুর বন্ধুরা এই বাড়িতে আবার ঢুকতে নারাজ। কিন্তু তপুকে এই ঘটনার মীমাংসা করতেই হবে, আসলেই সে খুনি কিনা ? পাগলের মাথায় আঘাতের চিনহ দেখা গেছে। হয়তবা সেটি তপুর আঘাত থেকেই হয়েছিল। সেই ঘরটিতে যাবার পর আঘাতের ব্যপারে সে আরও নিশ্চিত হল। চারপাশে রক্ত ছিটিয়ে আছে। প্রাণ বাঁচাতে কেউ শেষ চেষ্টা বুঝে করেনা। তপুর বেলায়ও তাই হয়েছিল। সে এত্ত জোড়ে কাউকে মেরে খুন করতে চায়নি। তারপরেও তপু ধরেই নিলো সে খুনি। বাড়ি থেকে বেরোবার পথেই আশিকের বলা প্লেটটিও তার চোখে পড়ল। একটু আশ্চর্য হল সে, এটা নিশ্চিত তাদের বাড়ির প্লেট। প্লেটে থাকা বিরিয়ানি পচে গন্ধ বেরুচ্ছে।

 বাসায় যেয়ে তপু তার মাকে এই ব্যপারটি বলল। তিনি ছেলের হাতে সে প্লেট দেখে কান্না বেধে রাখতে পারলেননা। এবার তপুর উৎসাহের বাধ ভেঙ্গে গেল। সে জানতে চাইল এই পাগল লোকটিকে এত সমাদর করবার কি ছিল। তপুর মা ছেলের দিকে চেয়ে রইলেন, তার মুখে এর জবাব ছিলনা। তিনি কিভাবে বলবেন তার ছেলেই নিজের অজান্তে নিজ বাবা অর্থাৎ পাগলটিকে হত্যা করেছে।

 এই পাগল লোকটির সাথে তপুর মায়ের বিয়ে হয়েছিল ষোল বছর আগে। পেশায় আইনজীবী ছিলেন। তপু তার ঘরেরই সন্তান, কিন্তু তপু তা জানতোনা। তপুর বয়স যখন দুই বছর, তখন একটি মামলা জনিত ব্যপার নিয়ে মক্কেলের সাথে খুব কথা কাটা কাটি হয়। এর পরেই সে কেমন যেন হয়ে যায়। চিকিৎসা সফল হয়না। তারপর ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যায়। একদিন কোন এক সুযোগে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সেই থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। রক্তের টানেই হউক আর আত্মার টানেই হউক, মৃত্যুর আগে নিজের অজান্তে প্রিয় মানুষের কাছেই ফিরে এসেছিলেন। তপুর মা বুঝতে পেরেছিলেন এটাই তপুর বাবা, তাই মানবিক কারণে সবার অলক্ষ্যে খাবার দাবার সহ সব কিছুই তাকে দিতেন। পরিচয় প্রকাশ করে তপুর সহজ সরল সৎ বাবাটিকে কষ্ট দিতে চাননি। কিন্তু তিনি কি জানতেন এমনটা হবে? এত্ত বছর পর তপুর আসল বাবার পরিচয় দিয়ে তপুকে কষ্ট দিতে চাইলেননা, নিজেই নিজের ভেতর সব লুকিয়ে রাখলেন।

-----------------------
 রাত একটা বাজে।
আজ আর তপুর জেগে থাকার নির্দেশ নেই। তপু নিশ্চিন্তে শান্তির ঘুম ঘুমাতে চায়। কিন্তু তপু বুঝতে পাড়ছে কেউ বাইরের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছে। পাকার উপরে অমসৃণ খালি পায়ের খস খস আওয়াজ হচ্ছে। আস্তে আস্তে ঘন হচ্ছে সে শব্দ। কেউ আসছে সন্তর্পণে, তপু ছাড়া বাকি সবার অজান্তে। আজ জানালা বন্ধ, এত ভয় হবার কথা না। তবুও তপু ঘামছে, সবাইকে বলতে চাচ্ছে চিৎকার করে, ‘সেই পাগলটা তার কাছে আসছে’, কিন্তু বলতে পারছেনা। সেই পাগল আকৃতির ছায়া মূর্তিটা বন্ধ দরজা জানালা ভেদ করে চলে আসছে তপুর খুব কাছে। তপুর পুরো শরীরটা অস্থির। সে ছুটে পালাতে চাচ্ছে। কিন্তু পারছেনা। এখন কেন যেন তার খুব বেশি ভয় হচ্ছে না। একটা আবেগে সে পাগলটার দিকে চেয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে, এই লোকটা তার কত চেনা। ততোক্ষণে সে পাগলটা তার পাশে চলে এসেছে। সে তপুর পা ধরে টানতে শুরু করল, ঠিকে সেইভাবে যেভাবে সেইদিন অন্ধকারে সেই বাড়িটিতে টেনেছিল। এরপর সে তপুর হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল। কিন্তু তপু তো স্বপ্নের দেশে আছে। এমন দেশ থেকে সে যেতে চায়না চির নিদ্রার ঘুমের দেশে। কারণ তখনো যে সে জানতোনা তার অজানা বাবা অজানা বেশে অজানা দেশ থেকে তাকে বুকে টেনে নিতে এসেছে।

 ******************* সমাপ্ত *********************
 অন্ধকারে কে? (ভৌতিক গল্প)
লেখক পরিচিতি লেখকঃ তৌফিক মাসুদ
email: md.masud172@yahoo.com website: www.taufiquemasud.blogspot.com
Share:

1 টি মন্তব্য:

তৌফিক মাসুদ বলেছেন...

লেখা দিয়েই দিলাম।

পৃষ্ঠাসমূহ

Popular

Translate

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

Like Us