This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

সেই কান্না (কালো জাদু ও পিতার মৃত্যু )


যখন জ্ঞান ফিরল নিজেকে মেডিক্যালের বেডে আবিষ্কার করলাম চোখ খুলেই মায়ের মুখটা প্রথমে দেখলাম তিনি ঢাকা থেকে ফিরেই আমার কাছে এসেছেন বলে জানালেন আর আমার অবস্থার জন্য বারবার নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকলেন সাথে সাথে শহীদ তার মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগলেন
অজ্ঞান হবার পর সেই বিভীষিকা থেকে কিভাবে ফিরে এসেছিলাম তা আমি জানতাম না নিশ্চয় শহীদের কল্যাণে তবে ওর উপর আমার খুব রাগ হচ্ছে, কেন আমার এমন অসুস্থতা আর বাইরে বেরোবার অপারগতা সত্ত্বেও আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল আমার মায়ের কাছে রাতের ঘটনাটা হয়তবা গোপন করা হয়েছে তা না হলে তিনি বারবার শহীদের প্রশংসা করতেন না

সাত

এই গাধা ছেলেটাকে আমার গোরস্থানে নিয়ে যাওয়াই ঠিক হয়নি এত ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আমি ভেবেছিলাম আরিফ সেটা উপভোগ করবে আর কিনা বেহুশ হয়ে কলা গাছের মত আমার উপরে পরে গেল এই জন্যেই বলে শহুরে গাধা গ্রামে এসেও ঘাস পায়না ওর জন্য সারাটা রাত কি কষ্টটাই না করতে হল সারা রাত ওকে কাঁধে করে গোরস্থানের কোন কোন ঘুরে বেড়াতে হল আর এই বদমাশ লোক গুলো হন্য হয়ে আমার পিছু ছুটছিল পেলে দুই জনেরই খবর হত আরিফের অবস্থা আরও খারাপ করে দিত আমি নানা কারণেই ছাড় পেতাম কিন্তু আরিফকে সেটা বলা যাবেনা
আজ ওর মা বাবা আসাতে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম ওর কালকের দিনটা হয়তবা কালো দিবস হিসেবে বর্ষ পঞ্জিতে স্থান করে রাখবে একই দিনে দুই দুইটা বিপদ থেকে বাঁচা কম সৌভাগ্যের কথা না মুরুব্বিদের দোয়া আছে নিশ্চয়

আট
আমার বিপদ কাটতে না কাটতেই আরেক বিপদের শুরু গ্রামে আসার দুই দিন পর থেকে আমার বাবার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে গ্রাম্য চিকিৎসায় কোন কাজ হচ্ছেনা অন্য দিকে ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আমার মাথার আঘাতের অবস্থা শুনে বেশ কয়েকদিন বিশ্রামে থাকতে বলেছেন এইখান থেকে ঢাকা যাবার রাস্তার অবস্থা শুনে আমাদের ঝুঁকি নিতে মানা করলেন কেননা রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকুনিতে মাথার অবস্থা আরও বেগতিক হতে পারে

গ্রাম থেকে ফিরে যাবার পর বাবাকে খুব ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হল অল্প সময়ের জন্য অসুখটা সারলেও দীর্ঘ মেয়াদে সেটি বাবার শরীরকে আরও কাবু করে দিচ্ছিল দিন পনেরর মত নানা রকম চেষ্টা করেও কোন ভাল লক্ষণ দেখা যাচ্ছিলোনা এমনকি নিদিষ্ট কোন অসুখ বেরও করা যাচ্ছিলোনা এক সময় আমার মামা বাবাকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু বাবার অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের জন্য পেনশনের টাকাটা উঠানো সম্ভব হলনা, আর এরই সাথে বাবার উন্নত চিকিৎসার পথ বন্ধ হয়ে গেল

মাস খানেক পর আমার বাবাকে আবার গ্রামে নিয়ে যাওয়া হল ততদিনে তাঁর ক্যান্সার ধরা পরেছে ডাক্তার বলছিল সিঙ্গাপুরে এর চিকিৎসা সম্ভব তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে বাবার পাওনা সকল সম্পদের বিনিময়ে চাচাদের কাছ থেকে কিছু টাকা চাইলাম কিন্তু তারা এক আনা দিতেও রাজি হলেন না এই দিকে আমাদের গ্রামে আসার খবর পেয়ে শহীদ তার মা আসলেন তারপর আমার মাকে বাবার চিকিৎসার জন্যে এক কবিরাজের কাছে নিয়ে গেলেন পরের দিন কিছু টাকা নিয়ে শহীদের মা আমার মা, আমাকে বাবাকে সেই কবিরাজের কাছে নিয়ে গেলেন আমার কখনই এই ধরনের চিকিৎসায় আস্থা ছিলনা কিন্তু মায়ের নাছোড়বান্দা আবদার আর শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবে আমি সেখানে গেলাম

কবিরাজের কাছে যাবার পর সে আমার মা বাবাকে একটি আবদ্ধ ঘরে নিয়ে গেল আমি বাইরে থেকে শুধু কবিরাজের আশ্চর্য রকমের কিছু চিৎকার শুনছিলাম

বাইরে ঘুট ঘুটে অন্ধকার মশার কামড় আর উইপোকার সাথে সময়টা ভাল কাট ছিলনা নিশ্চয় আমার মা বাবা কবিরাজটার সাথে আধাঘণ্টা ধরে কি করছিল তা আমি বুঝতে পারছিলামনা সাথে শহীদের মা ছিল শহীদ আমাদের সাথে আসেনি থাকলে সময়টা ভাল মতই কেটে যেত কবিরাজের ঘরটা নিঝুম একটা জায়গায় চারদিকে ছোট ছোট লতা পাতার গাছ, বড় কোন গাছ নেই একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানির মধ্যে ছোট্ট একটা চরা, তার মধ্যে ছোট্ট একটা ঘর আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে রেখেছিলাম যাতে লোকটার সেই চিৎকার গুলো না শুনতে হয়

গান শুনতে শুনতে অনমনে হয়ে গিয়েছিলাম বাবার অসুখের পর থেকে গান শোনা হয়নি গান শোনার মত মন এখন নেই মা আর আমি সারাদিনই নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে বাবার অসুখের অরোগ্যের কথা চিন্তা করতাম এখন গান শুনছিলাম ঠিকই, চিন্তা করছিলাম কিভাবে কবিরাজ বাবার চিকিৎসা করতে পারেন নানা কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় খেয়াল করলাম আমার চারদিক থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণের জন্যে কবিরাজের ঘরটার উপর দিয়ে ছোট খাটো একটা ঝড় বয়ে গেল সাথে সাথে ভেতর থেকে চিৎকার বন্ধ হয়ে গেল আমি বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে দৌড়ে গেলাম ভেতরে ঢুকতে যাব ঠিক সেই মূহুর্তে অদ্ভুত কণ্ঠের আওয়াজ শুনলাম আমি বাইরে দাঁড়িয়ে গেলাম ভাবলাম লোকটা আমার বাবার অরোগ্যের জন্যে অদ্ভুত কোন উপায় বের করছেন
ভেতর থেকে সবাই বাইরে বেরিয়ে আসলে কবিরাজ আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, ‘তোর বাবাকে এমন সময় আমার কাছে নিয়ে এলি যখন আমার কিছুই করার থাকলনা তারপর যা বলল তা সংক্ষেপে এইরকম, আমার বাবাকে তার রক্ত সম্পর্কের কেউ তাকে তাবিজ করেছে স্থানীয় ভাষায় যাকে বলেকূফরী কালাম আমাদের গ্রামের বাড়িতেই সেই তাবিজ গুলো পাওয়া যাবে 

শহীদকে সাথে নিয়ে কাক ভোরে কবিরাজের বাড়ির দিকে রওনা হলাম কবিরাজকে নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটলাম সকাল সাতটার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছলাম কবিরাজের কথা মত আমার বাবার শোবার খাটের নিচে একটা মানুষের হাড় খুঁজতে লাগলাম আশ্চর্য হলেও সত্যি ঠিক আমার বাবার বালিশের নিচের অংশে একটা হাতের অংশের হাড় পাওয়া গেল যেমনটা কবিরাজ বলেছিল হাড়টির উপরে কি এক কালি দিয়ে আরবি মত কিছু লেখা তারপরে বাইরে বের হয়ে এলাম কবিরাজ বাড়ির চারদিকে কিছু একটা খুঁজতে লাগল ততক্ষণে গ্রামের লোকজন আমাদের বাড়ির চারপাশে এসে জড়ো হয়েছে আমার কাকার বাড়ির লোকজন খুব একটা দেখা গেলনা রাতুলকে এক কোনায় মুখ গোমরা করে বসে থাকতে দেখলাম চাচী লোকজনকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল আমি একটু আশ্চর্য হলাম আমাদের এই কাজের সাথে তাদের বিরক্ত হবার কারণ কি

একসময় কবিরাজ কিছু একটা খোজার জন্য গর্ত করতে লাগল কবিরাজের সাথে সাথে আমরাও গর্ত করতে লাগলাম প্রায় দুইহাতের মত গর্ত করার পর যা দেখলাম তাতে সাথে থাকা লোকজনের মধ্যে একরকম শোরগোল পরে গেল এবার বাড়িতে এসে বাবা অসুস্থ হবার আগে আমাদের বাড়ির এক কোণে একটা মেহগনি গাছ লাগিয়ে ছিলেন সেই গাছের গোড়াতে একটা আস্ত মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেল মাথার চুলগুলো তখনো চামড়া থেকে খুলে পড়েনি মাথার চামড়া আর ভেতরের মগজ থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বেড় হচ্ছিল আমার মনে হল খুব বেশী দিন হয়নি এটাকে এখনে রাখা হয়েছে

কে এমন প্রাচীন কালো যাদুর চর্চা করে এখানে শহীদ তার পরিবার কিভাবে জড়িত? রাতুলের জীবনে কি হবে?

আট---

কবিরাজ মাথার খুলিটাকে নিয়ে সবার অলক্ষ্যে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল তারপর দরজা লাগিয়ে ভেতরে কি করল তা আমাদের বুঝার উপায় ছিলনা এদিকে আমারও একটা ব্যপার অবাক লাগছিল, যে গাছটার নিচে এই খুলিটা পাওয়া গিয়েছিল সে গাছটাও ইতোমধ্যেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে হতে পারে গাছের কাছে গর্ত করাতে গাছটার শিকর মরে গেছে নতুন লাগানো গাছের তলায় এই রকম একটা আস্ত খুলি পুতে রাখাতে ব্যপারটা আমাদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল কারণ সেখানকার মাটি আগে থেকেই আলগা ছিল তবে এত জঘন্য এবং ভয়ংকর এই কাজের হেতু কি হেতু হতে পারে তা আমি জানতাম না শহীদকে এই ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে ওর মুখটা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল আমকে শুধু এইটুকু বলল, এর পেছনে যাদের হাত থাকতে পারে, সে ব্যপারটা কিছুটা আচ করতে পেরেছে
অন্যদিকে কবিরাজ প্রায় মিনিট দশেক ঘরে থাকার পর বের হয়ে এলেন এবার কবিরাজের মুখটা অনেক ফ্যকাশে দেখাল শহীদ কি বুঝে দৌড়ে গেল লোকটা ওর উপরে প্রায় ঢলে পরল তারপর খুব ধীর গলায় কাউকে ঘরে ঢুকতে বারণ করে টলতে টলতে রাস্তার দিকে চলে গেল আমি ঘরটার মধ্যে উকি দিয়ে দেখলাম মাথার খুলির ভেতরের মগজ বাইরে বেরিয়ে এদিক সেদিক পরে আছে আমি কোনমতে দরজায় তালা লাগিয়ে কবিরাজের পিছু পিছু ছুটলাম যেয়ে দেখলাম শহীদ লোকটার সাথেই আছে এই কালো জাদু কারা করতে পারে সে ব্যপারে ইনফরমেশন নিচ্ছিল কবিরাজ কারো একটা নাম নিচ্ছিল কিন্তু শহীদ আমাকে দেখেই কেন যেন কথার ধারা পরিবর্তন করল আমিও সে ব্যপারে আগ বাড়ালাম না আমি বরং আমার বাবার ব্যপারে কি করা যায় সে প্রসঙ্গ তুললাম কবিরাজ যা বলল তাতে আমার কিছু কথা সত্য মনে হল আর কিছু মিথ্যা মনে হল কবিরাজ সেই মাথার খুলির ভিতরে শকুনের ডিম পচা অবস্থায় পেয়েছিল আর এই পদ্ধতিতে যদি কাউকে টার্গেট করে জাদু করা হয় তাকে বাঁচানো খুব কষ্ট হয়ে যায় কবিরাজ নাকি নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করেছিল আমার বাবাকে বাচাতে, কিন্তু তা করতে গিয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে গেছেন এই ব্যপারটা একেবারেই সত্যি মাথার খুলিটা নিয়ে ঘরে ঢুকার আগ পর্যন্ত উনি বেশ সুস্থই ছিলেন  

নয়

এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরে আমার বাবা জগতের মায়া ছেড়ে ওপারে চলে গেলেন অবাক করার ব্যপার বাবা মারা যাবার দিন তিনেক পরে সেই অদ্ভুত কবিরাজও মারা গেলেন আমার বাবা খুব শীঘ্রই মারা যাবেন সে ব্যপারটা ডাক্তার এবং আমরাও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম মারা যাবার আগে তার মাথার মগজ নাক দিয়ে বেয়ে বেয়ে পরছিল কিন্তু কবিরাজের মৃত্যুর ব্যপারটা খুবই অদ্ভুত তাকে তার বাড়ির পাশে ঝোপের তলায় ছিন্ন ভিছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে বাইরে আমার চাচী-মা কবিরাজ মারা যাওয়ার ঘটনাটা চিৎকার করে করে সবাইকে শোনাচ্ছিল কবিরাজ মারা যাওয়াতে তার এত উৎফুল্ল হবার কি ছিল তাই আমি বুঝতে পারছিলাম না

বাবা মার যাবার পরে মা একেবারে শোকে পাথর হয়ে গেছেন কিন্তু বাবা নেই তা ভেবে আমার চোখ দিয়ে এক ফোটাও কান্নার পানি পড়ে ছিলনা শেষ পর্যন্ত কবিরাজের কথাই বারবার আমার কানে বাজছিল কেন জানি মনে হচ্ছিল আমার বাবার অসুখের পিছনে চচাদেরই হাত ছিল শহীদ ঠিক কথাই বলেছিল আমকেও ওরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল

আমি গতানুগতিক গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর কারণে বাংলা সিনেমা দেখা বন্ধ করেছিলাম আজ আমার জীবনটা অনেকটা বাংলা সিনেমার কাহিনীর মতই হয়ে গেল বাবার করূন মৃত্যু, বড় চাচা ভিলেন আর মাঝখানে নায়ক আমি সুতরাং এই গল্পের শেষ হবে প্রতিশোধ দিয়ে
Share:

কোন মন্তব্য নেই:

পৃষ্ঠাসমূহ

Popular

Translate

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

Like Us