This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

সেই কান্না

এক
সেদিন সকাল বেলায় রাতুল আমার বাড়িতে হাজির। আমি ভাবলাম, এত সকালে এই ছেলের ঘুম থেকেই উঠবার কথানা, সে কিনা আমার বাড়িতে! নিশ্চয় কোন বিশেষ কারণ আছে। আমি এই বিশেষ আর ব্যতিক্র্ম কিছুরই খোজ করছিলাম।

প্রায় পাঁচ বছর পর ঢাকা থেকে গ্রামে আসার পর গ্রামের লোকজনের একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম। সবাই জিজ্ঞাসা করে, বাবা কোন ক্লাসে পড়, তোমার বাবা-মা কেমন আছে, অনেক বড় হয়ে গেছ ইত্যাদি ইত্যাদি।তাই গত পাঁচ দিনের মধ্যেই গ্রামে ঘুর ঘুর করাটা রীতিমত বিরক্তিকর হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল গ্রামের বাইরে দূরে কোথাও ঘুরতে যাই। রাতুলের কাছ থেকে পজিটিভ কিছু আশা করছিলাম আমি। তাই এত আরামের ঘুম হারাম করে, কোন কারণ জিজ্ঞাসা না করেই ওর সাথে বাইরে বের হলাম।

রাতুল আমাকে হতাশ করেনি। বরং আমার উৎসাহ দিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।কারণ সে গোরস্থান বাড়ি যেতে চাচ্ছিল, যেখানে আমাদের বেশ কয়েকটি বন্ধু থাকতো। ছোটবেলায় গ্রামটাতে অনেক যেতাম। আমাদের এইখান থেকে সেই গ্রাম বেশ দুর। রাতুল বলল এই শীতের সকালে রিক্সা, ভ্যান কোনটাই পাওয়া যাবেনা। সুতরাং পা- একমাত্র ভরসা।

গোরস্থান বাড়ি যাবার পথে ঠিক তাই হল যেমনটা রাতুল বলেছিল।রাস্তার আশেপাশে কোন রিক্সা বা ভ্যান নেই।দশ বছর আগে তিন গ্রামের মানুষের করা সেই মাটির রাস্তা এখনো পাকা হয়নি। আঁকা বাঁকা হয়ে দূরে মিশে গেছে। শুধু পরি্বর্তন একটাই,দুই পাশের ছোট ছোট গাছগুলো এখন বড় হয়েছে। এই সকাল বেলায় গাছের ছায়া গুলো পথটাকে প্রায় অন্ধকার বানিয়ে রেখেছে। আজকে কুয়াশা খুব বেশী বলে মনে হচ্ছে।
প্রায় দুই-কিলো পথ হেঁটে গোরস্থান বাড়ি গ্রামে এসে পৌঁছলাম। তখনো কুয়াশাচ্ছন্ন চারদিক।তবে গ্রামের মানুষেরা খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তাই রাস্তায় কিছু মানুষ পাওয়া যাচ্ছিল। গ্রামে ঢোকার দুইটা রাস্তা আছে, একটা গ্রামের সামনে যে গোরস্থান আছে তার মাঝ দিয়ে, অপরটা একটু দূর দিয়ে। রাতুল বলল আমার বন্ধুদের বাড়ি যেতে গোরস্থানের মধ্যদিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। তাই ওর কথা মত আমরা গোরস্থানের মধ্যদিয়ে যাওয়া শুরু করলাম।
গোরস্থানটার চারপাশে গাছ লাগানো ছিল।কিন্তু ভেতরটায় ছোট ছোট ঝোপঝাপরা ছাড়া বড় গাছপালা খুব একটা চোখে পরছিলনা। ফাঁকা জায়গায় কুয়াশাটা আরও বেশী ঘন দেখাচ্ছিল। খুব কাছের জিনিস ছাড়া কোন কিছুই স্পষ্ট দেখাযাচ্ছিলনা।গোরস্থানের ভিতর দিয়ে অনেক আগের চেনা পথে আ্মরা হাঁটছিলাম। কিন্তু কিছুদূর যেয়ে আমাদের মনে হল আমরা ঠিক পথে নেই, অন্য কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। তাই দুইজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, গোরস্থানের বাইরে বের হয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে গ্রামে যাব।প্রায় মিনিট দশেক হাটার পর আমরা আবার আবিষ্কার করলাম, ফিরতি পথেও আমরা ভুল রাস্তায় হাঁটছি।

তখনো সূর্যের আলো ঘন কুয়াশা ভেখ করে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। আমরাও দিক হারিয়ে বসেছি। কোন দিকে গ্রাম আর কোন দিকে যাব সেটা বুঝতে পারছিলামনা। চারদিক থেকেও কোন জনমানুষের আওয়াজ পাচ্ছিলাম-না। আমরা হাটতে হাঁটতে কোথায় এসে পৌঁছেছিলাম তাও জানতাম-না। তাই আমার একটু একটু ভয় লাগতে শুরু করেছিল। রাতুল বেশ কয়েকবার বন্ধুদের নাম ধরে ডাকল যাতে ওরা আশেপাশে না থাকলেও অন্য কেউ ডাকে সাড়া দেয়। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পড়েও কোন সাড়াশব্দ পেলাম না। অগত্যা আর অন্য কোথাও না যেয়ে, সূর্য উঠার অপেক্ষায় সেই জায়গাতেই ঠায় দাড়িয়ে রইলাম।

আমরা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ খুব কাছাকাছি জায়গা থেকে করুণ সুরে কান্নার আওয়াজ পেলাম। ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে রাতুল আমার মুখের দিকে চাইল।আমি ওকে কিছু বললাম-না। তবে এটা বুঝতে পারলাম আমার পাশাপাশি রাতুলও রীতিমত ভূতের ভয় পেয়েছে। ছোটবেলায় এই রকম কান্নার গল্প অনেক শুনেছি। আজ তা বাস্তবে শুনলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আমাদের মনে হল, কোন মেয়ে মানুষ আমাদের অবস্থান আঁচ করতে পেরে সাহায্য চাইছে। মেয়েটি কাঁদছিল আর বলছিল, ‘ বাবারা, কে আছেন? আমার ছেলেরে বাঁচান

মেয়েটির করুণ কান্নায় আমার খুব মায়া হল কিন্তু কাছে যাবার সাহস হলনা। রাতুল আগ বাড়িয়ে বলল, “চল্ মেয়েটার কাছে যাই ওর কথায় আমি সাহস পেয়ে মেয়েটির দিকে যেতে লাগলামরাতুলও আমার পিছু পিছু আসল। কিছুদূর যাবার পরেই আমরা তাকে পেলাম। একটা ঝোপের আড়ালে মেয়েটির শুধু পিঠের অংশটুকু দেখা যাচ্ছিল। তার গায়ে অনেকটা ধূসর রংয়ের চাদর ছিল।আমি আরেকটু এগিয়ে মেয়েটিকে ডাকলাম, মেয়েটি কান্না থামালেও কোন টু শব্দ করলনা, পেছনেও ফিরে তাকাল-না। মেয়েটি নিশ্চুপ থাকাতে আমরা থমকে দাঁড়ালাম। মরা লাশের সাথে যে আগরবাতি আতর দেওয়া হয় তার গন্ধ আসছিল, সাথে লাশের পঁচা গন্ধও অল্প অল্প পাওয়া যাচ্ছিল। ধরনের গন্ধে আমি অভ্যস্ত নই। পঁচা গন্ধ অসহ্য ঠেকছিল। দ্রুত ব্যপারটা বুঝতে আমরা মেয়েটির খুব কাছাকাছি আসলাম। তারপর যা দেখলাম তা তখন পর্যন্ত দেখা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্য। ঝোপের তলায় একটা লাশ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পরে আছে। আর এতক্ষণ যাকে মেয়ে ভাবছিলাম, সে ষাটোর্ধ বুড়ি। তাকে দেখে এমন মনে হচ্ছিল যেন সে অনেকক্ষণ ধরে আমাদের দিকে চেয়েছিল। বুড়িটা কি যেন একটা জিনিস নিয়ে নারাচরা করছিল। আমার মনে হল ওটা লাশটার মাথা। আমি হতবিহব্বল হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। পেছন থেকে রাতুল আমাকে আলতো টোকা দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘চল্ এইখান থেকে পালাই।ও শুধু এইটুকু বলে লাশটার ঠিক বিপরীত দিকে ভোঁ দৌড় দিল। আমিও কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ওর পিছুপিছু ছুটলাম। আচমকা রাতুল একটা খাদে পরে গেল। প্রথমে ভেবেছিলাম শেয়ালের গর্ত হবে। পরে একটা মাথার খুলি আর কিছু হাড় গোড় দেখে বুঝতে পাড়লাম এটা একটা পুরনো কবর। রাতুল সেটা বুঝতে পেরে আতঙ্কে প্রচণ্ড জোড়ে চিৎকার করতে লাগল যেন কেউ ওকে নিচ থেকে টেনে ধরেছে। ওর শরীরটা বেশ মোটাসোটা হওয়াতে, ওকে গর্ত থেকে টেনে বের করতে আমার বেশ বেগ পেতে হল। ওকে উঠিয়ে দেখলাম পায়ে বেশ আঘাত পেয়েছে। উপায়ন্তর না দেখে অবস্থা নিয়েই দৌড়াতে লাগলাম। আমি কখনো আস্তে কখনো জোরে দৌড়চ্ছিলাম যাতে রাতুল আমার পিছুপিছু আসতে পারে। লক্ষ-হীন ভাবে বেশ কিছুদূর যাবার পর রাতুলের পায়ের আওয়াজ আর পাচ্ছিলাম না। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম, তারপর ওর নাম ধরে ডাকলাম, কিন্তু কোন উত্তর পেলাম না।


তখনো সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছিলোনা। আমি একের পর এক চিৎকার করে গেলাম। রাতুলের কোন সাড়াশব্দ পেলামনা। কিন্তু তখনো বুড়িটার সেই কান্নার আওয়াজ আসছিল। হঠাৎ মাথাটা চক্কর দিতে লাগল। নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছিল। মনে হল কেউ যেন আমার মাথার উপড়ে আঘাত করল। তারপর পা পিছলে একটা কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলাম। এরপর যে কি হয়েছিল তা আর বলতে পারবনা। এত-বড় এই গোরস্থানের কোন জায়গায় আমি ছিলাম তা নিজেও জানতাম না।
Share:

বাচ্চা ভুতের জম্মদিন

ভুতেরা আমাদের মতই নিজস্ব সমাজ নিয়ে বসবাস করে। ইদানীং ভূতদের সমাজে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল। বয়স্ক ভূতদের ধারণা পাজি টাইপের ছেলে-মেয়েদের ঘাড়ে অল্প বয়সী ভূতেরা চেপে বসাতে এই অবস্থা। সেই ছেলে-মেয়েগুলির বিভিন্ন কর্মকান্ড তাদেরও প্রভাবিত করছে। আর এতেই হয়েছে বিপত্তি।

গ্রামের উঠতি নেতা ছেনু মিয়ার ইঁচড়ে পাকা ছেলে গেদু মিয়ার ঘাড়েই চেপে বসেছিল বাচ্চা ভূত। প্রথম প্রথম সে গেদু মিয়ার ঘোর বিরোধী ছিল। কিন্তু ইদানিং সে উল্টো গেদুর অনুসরন করে। আর এ নিয়ে প্রায় দিনই বাচ্চা ভূতের সাথে তার দুসম্পর্কের বড় ভাই কাচ্চা ভূতের সাথে লেগে থাকত।

গেদু মিয়া ঘটা করেই নিজের জম্মদিন পালন করেছিল, আর বাচ্চা ভূতও তার সাথে মজেছিল। রাতভর জম্মদিনের আনন্দ ফূর্তি করে বাচ্চা ভূত বিকেলে এল কাচ্চা ভূতকে খোঁচা দিতে। কাচ্চাও কমে যায়না। সেও প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল। বাচ্চা ভূত কাচ্চা ভূতকে দেখে দূর থেকে বেশ জোর গলায় বলতে লাগল, “আহ, কাল রাত্রে জম্মদিনের কী পার্টিটাই না দিলাম”।

একথা শুনে কাচ্চার গায়ে জ্বালা করল, কিন্তু সে দমলনা। সেও বলতে লাগল, “পার্টি না ছাই, কপাল গুনে অমাবশ্যা রাইতে জম্মদিন পাইছিলি। আর সেই সুযোগে ছেনু মিয়ার পুকুরের মাছ সাবাড় করছত। আর এখন খুব বড় গলায় বলতাছত ‘পার্টি দিছি’। সারা জীবন তো মাছ খাওয়ার লাইগ্যা আমার পিছে পিছে ঘুরতি”

বাচ্চা ভূতঃ  চিন্তা কইরো না, তুমার লাইগ্যা দুই চাইরটা অবশিষ্ট আছে।

কাচ্চা ভূতঃ  না খাইয়া থাকুম, তাও তোর ধরা মাছ আমি নিমুনা্‌, খামুনা।

বাচ্চা ভূতঃ  না খাইলে নাই, আমার মাছ খাওনের অনেক ভূত আছে। আমি ফা-চল্লিশের কাছে যাইতাছি। (ফা-চল্লিশ বাচ্চা ভূতের সমবয়সী মেয়ে ভূত। ইদানীং তার সাথে সে খুব ভাব দেখায়)

কাচ্চা ভূতের বিকেলের নাশতা করা হয়নি। সে ভাবল এমন ফ্রি মওকা কি বারবার আসে! তাই পেছন থেকে বাচ্চাকে ডাকল, “আরে যাবি যা, তোর এই চুনো পুঁটি কে খায়? তাও ছেনুর পুকুরের”।
বাচ্চাদের মজার গল্প
Child Ghost

বাচ্চা ভূতঃ  তোমার মত চুনো পুঁটি আমি খাইনা, আমিতো তেলাপিয়া খাই।

কাচ্চা ভূত বাচ্চাকে প্রশংসা করে বলল, “হু, তুই বুঝি মস্ত শিকারী হয়ে গেছিস রে। দেখি তো তেলাপিয়া মাছগুলো কত্ত বড়”।

নিজের প্রশংসা শুনে বাচ্চা খুশিতে গদ গদ হয়ে গেল। সে কাচ্চার কাছে এসে একে একে তার মাছ দেখাতে লাগল। কাচ্চা প্রথমে খুব খুশি হল। কিন্তু পরমূহুর্তে মন খারাপ হয়ে গেল। মাছগুলো সবই আধা খাওয়া। বাচ্চা ইচ্ছে করেই এমন করেছে, যাতে কেউ না খায়। কিন্তু কাচ্চা হাড়বার পাত্র নয়। সে কিছু না বলেই একটা মাছ খেতে শুরু করল। এ অবস্থা দেখে বাচ্চা ভূতের দুঃখে বুক ফেটে যাবার উপক্রম। তার কৌশল কাজে দেয়নি। সে কাচ্চা কে কিছু বলতে পারছেনা। কিন্তু সামান্য সময়ের মধ্যে খোঁচা দেবার কৌশল বের করে ফেলল। সে মুখ ভেংচিয়ে বলল, “আমাদের জম্মদিনের খাবার তো খাইলা, তয় কাচ্চা ভাই, তোমার কিছলু ভাইয়ের জম্মদিন কবে? পার্টি টার্টি দিবানা”? (কিছলুর উপর কাচ্চা ভড় করেছিল)

বাচ্চা ভূত জানত কিছলুর জম্মদিন সে নিজেই জানেনা, আর কাচ্চা তো দুরের কথা। তাই একটা কঠিন খোঁচা দেয়া গেল। কাচ্চা ভূতের ততক্ষণে খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সে জানে এর উত্তর নেই। কিন্তু সে কি দমবার পাত্র। সে খুব জ্ঞানী মানুষের মত বলে উঠল, “আরে তোগ জম্মদিন আর আমাগো। কত্ত তফাত! আমাগো সময়ের ছেলে মেয়েরা মায়ের কাছে নিজের জম্মদিন জিজ্ঞেস করলে তাদের মা বলে, ‘হ্যাঁ গো কিছলুর বাপ, আমাগো কিছলু আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে হইছিল না?’ আর তোগ জম্মদিন। গেদু হওয়ার পাঁচ মাস আগেই ডাক্তারে জম্ম তারিখ সময় সহ কইয়া দিছে। ডাক্তারে যেন আগের তনেই জানে গেদুর মারে অমুখ তারিখে সিজার কইরা গেদুরে বাইর করব”।       
   


Share:

বাচ্চা ভূত আর কচ্ছপের গল্প

বাচ্চা ভূতেরা এই ঠান্ডা বাতাসেও কাপড় গায় দিতে নারাজ। ছেনু মিয়ার উপর আছড় করার পর থেকে তাদের শরীর রাগে আরও হিট হয়েছে। শরীর কি গরম না হয়ে পারে? ছেনু মিয়ার কাজ কম্ম দেখলে সকলেরই গাঁ জ্বালা করবে, শুধু ভূত কেন! সেদিনতো বাচ্চা ভূতদের কথা শুনছিলই না, এবার একেবারেই তাদের দেখানো পথের উল্টো পথেই সে চলতে আরম্ভ করেছে। অবশ্য ছেনু মিয়া আগে থেকেই এ পথে চলত। 

ফকির আক্কেল আলীর পদধূলি নিতে ছেনু মিয়া এবার নিজে সশরীরে তার বাড়িতে উপস্থিত। সমস্যা তার রাতে ঘুম হয়না। রাত ভর বাচ্চা ভূতেরা তাকে জ্বালাতন করে। বাচ্চা ভূতেরা আবার তাকে ধরেছে একথা শুনে আক্কেল মিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। এ যে তার চরম ব্যার্থতা। সে একবার যার চিকিৎসা করেছে সে আর কখনোই ভূতের খপ্পরে পরেনি। কিন্ত এই সেদিন ছেনু মিয়ার বাড়িতে বৈঠক দেবার পরেও আবার ছেনু মিয়াকে ভূতে পেয়েছে। আক্কেল আলীর এইবার আক্কেল হল, তার কবিরাজি শেষ কথা না। সুতরাং এলাকায় ইজ্জত বাঁচাতে হলে তাকে এই বাচ্চা ভূতের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে হবে।
 

বাচ্চা ভূতেরা এখন ছেনু মিয়ার সাথে নাই। তাহলে তাদের পাওয়া যাবে কোথায় এটাই এখন চিন্তার বিষয়। আক্কেল আলী সাথে সাথেই আয়না পরা দিল। ছেনুকে বলল, বাচ্চা ভূতেরা তাঁকে স্বপ্নে কি দেখায়। ছেনু মিয়া বলল, “শয়তান ভূত গুলান একটা কচ্ছপের উপর উইঠ্যা আমার দিকে তাইড়া আসে। এ কথা শুনে লোকেরা হেসেই খুন। আক্কেল আলী তার ধ্যন ভেঙ্গে দিয়ে বলল, “ব্যাটা গাধা, কচ্ছপ রে ডরাও, তাইলে আর কিছু দেখলে তো মইরাই যাইবা। ছেনু মিয়া ভাবল, এই ভূতেরা তার রাজনৈতিক ইমেজের বারোটা বাজালো বলে।

অনেক কষ্টের পর বাচ্চা ভূতদের সন্ধান পাওয়া গেল। আমির শেখের বাড়ির বাগানে তাদের কচ্ছপের উপরে দেখা গেল। সাথে সাথেই লোকজন নিয়ে আক্কেল আলী ছুটলেন। আমির শেখের বাগানে যেয়ে আক্কেল আলী ও অনান্যরা দেখল, একটা মস্ত বড় কচ্ছপের উপরে বসে বাচ্চা ভূতেরা নির্ভয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাচ্চা ভূতদের সাহস দেখে আক্কেল আলী নিজেই ভয় পেয়ে গেল। তাই একটু দূর থেকেই কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করতে লাগল।

আক্কেল আলীঃ বল, তোরা ক্যান আবার ছেনু মিয়ারে জ্বালাতন করতাছস।
বাচ্চা ভূতঃ ওরে ভালা হইতে কইছিলাম, ভালা হয় নাই, আবার গম চোর আমির শেখের লগে যোগ দিয়া মিছিল করতাছে।

ছেনু মিয়াঃ মিছিল করুম না তো খাওন তুই দিবি।

বাচ্চা ভূতঃ সেদিন চান্দির উপর কিল খাইয়া কেমন লাগছিল।

একথা শুনে ছেনু মিয়া পিছপা হল। সকলে ভয় পেয়ে চুপ মেরে গেল।

আক্কেল আলীঃ যা, আমি ছেনু মিয়ার হইয়া বলতাছি, ছেনু আর গম চোরেগো সাথে ঘুরবোনা। কিন্তু একটা কথা বইলা যা, এতো পশু পাখি বাদ দিয়া কচ্ছপের উপর উইঠা ছেনুরে ভয় দেখাইতাছস ক্যান?

বাচ্চা ভূতঃ আরে পয়সা লোভী রাজাকার কোনহানকার, ভূত খালি তাড়াইতেই পাড়, ভূতে যে ক্যান আর কি দুঃখে মাইনষ্যের ঘারে চাপে তা বোঝনা। এই মাইনষ্যের বাচ্চা ছেনু যাগো হইয়া কাজ করে তারা গ্রাম চালাইতাছে কচ্ছপের মত আস্তে আস্তে। তো আমি কচ্ছপের পিঠা না উইঠা কি চিতা বাঘের পিঠে উঠুম!
 

অতঃপর সকলেই মাথা নাড়িয়া কহিল, বাচ্চা ভূত ঠিক কথাই বলিয়াছে।


Share:

রস রচনাঃ কা-পাঠশালা

একদা কাকেরা তাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দেবার জন্য মানুষের অনুকরণে পাঠশালা খুলল। রসুল পুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বট গাছে সে পাঠশালার নাম দেয়া হল, ‘কা-পাঠশালা’।  কাকেরা সকলে মিলে ঠিক করল, যেদিন আকাশের সূর্য সাদা মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকবে সেদিন থেকেই তাদের কা-পাঠশালার পাঠদান শুরু হবে।

এক দিন ঠিকই তাদের সেই দিনটি আসল, তাই সকাল না হতেই সম্ভাব্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কাকদের কা-কা ধ্বনিতে কবি কাকের বাড়ির চারপাশ মুখর হয়ে গেল। তাদের কা-পাঠশালার  প্রধান পণ্ডিত হিসেবে কা-পাঠশালার উদ্যোক্তা কবি কাক, সঙ্গীত ও ভাষা শিক্ষা বিষয়ে কণ্ঠী কাক, ধর্ম বিষয়ে নিমাই কাক ও ভ্রমণ বিষয়ে ছোটকু কাক দায়িত্ব পেল। সকাল বেলায় সকলেই উপস্থিত থাকলেও নিমাই কাকের দেখা নেই।

নিমাই কাক বরাবরই একটু আলসে প্রকৃতির। প্রতিদিনের মত আজও তার ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হল। মেঘে সূর্য ঢেকে থাকাতে সে মনে করেছিল সূর্যই উঠেনি। কিন্তু কবি কাক নাছোড় বান্দা। তাকে সে কা-পাঠশালাতে নিয়ে যাবেই যাবে। এদিকে নিমাই কবি কাকের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকল। ঘুম তাকে ছেড়ে দিলেও সে ঘুমকে ছাড়তে নারাজ। আস্তে আস্তে সকল কা-পাঠশালার সঙ্গে জড়িত কাকেরা নিমাই কাকের বাড়িতে এসে হাজির হল। নিমাই কাক ভাবল এবার আর তার ঘাপটি মেরে বসে থাকা চলবেনা। সে পাঠশালার দায়িত্ব না নিলে কাক সমাজে তার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। তাই সে ঢুলতে ঢুলতে বাইরে বেড়িয়ে এসে বলল, “কি হইছেরে?”

কাক সমাজের এত বড় একটা ব্যপার কিন্তু সে মাথাই ঘামাচ্ছে না। তাই সকলের রাগ হল, কিন্তু মুরুব্বি বলে কেউ কিছু বললনা। কিন্তু শ্যামল কাক একটু হুজুগে প্রকৃতির ছিল। সে বলেই ফেলল, “ দেখছেননা কি হইছে? আপনার মত দিনের বেলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাকাল ফল খাওয়ার স্বপ্ন দেখলে কি কাকদের দিন যাবে?” নিমাই কাক চারদিকে চেয়ে দেখল কার এত সাহস। তবে সে নিরুত্তর রইল।

মানুষের পাঠশালা শুরু হবার আগেই কাকেরা তাদের শিক্ষাদান শুরু করল। কিন্তু আশ্চর্য ব্যপার, অতি মাত্রায় কোলাহল প্রিয় বাচ্চা কাকেরা একেবারেই শান্ত হয়ে রইল। অন্যদিকে শান্তি প্রিয় মানুষের বাচ্চারা ক্লাসে ঢুকেই চিৎকার জুড়ে দিল। কাকেরা ভাবল, এই জায়গাতে তাদের বাচ্চাদের জয় হয়েছে। এরা মানুষের বাচ্চাদের মত বেয়াদব না। 

কণ্ঠী কাক তার ছাত্রদের মনোযোগের সাথে কা-সঙ্গীত শেখাচ্ছিল। তার ছাত্ররা তার সাথে সাথে সুর তুলে কা-কা, কাও-কাও সুরে গান গাচ্ছিল। কিন্তু কন্ঠীর বেজন্মা বাচ্চা কোকিল কাক কিছুতেই সুর মেলাতে পারছিলনা। নিজের সন্তানের এইরূপ অবস্থা দেখে কন্ঠীর মাথা হেট হয়ে গেল।
ভর দুপুরে কাকেরা তাদের পাঠদান শেষ করল। এবার ছোটকু কাক নির্বাচিত পাঁচ জন বাচ্চা কাক নিয়ে মানুষের পাঠশালায় ঢুকল তাদের পড়া চুরি করতে। কিন্তু সকল কে অবাক করেই ছোটকু মাত্র দশ মিনিটের মাথায় বের হয়ে এলোএতে কবি কাক বিরক্ত হয়ে এর কৈফিয়ত চাইল। ছোটকু রেগে গিয়ে বলল, “মানুষের পড়া চুরি করার আর কিছু নেই, আমি যেয়ে দেখি ওদের বাচ্চাদের ‘হাট্টি মাটিম টিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম’ জাতীয় কবিতা পড়াচ্ছে। আমি বলি, এই কবিতার কি কোন অর্থ আছে না এতে কিছু শিখবার আছে। তার চেয়ে বরং আমাদের কবি কাকের কবিতাই অনেক ভাল”।

ছোটকু কাকের কথায় অন্যরা সায় দিল। নিমাই কাক মাথা নেড়ে বলল, “তাই তো বলি মানুষের বাচ্চারা সারাদিন লেখাপড়া শিইখ্যা পাঠশালা থেকে বের হইয়াই আমার বাসার দিকে ঢিল ছুড়ে ক্যান!”
সকলেই মাথা নাড়িয়া কহিল নিমাই কাক ঠিক কথাই বলিয়াছে। 

            
Share:

পৃষ্ঠাসমূহ

Popular

Translate

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

Like Us