এক
পুকুর পাড়ের বাবলা গাছটির পাতাগুলোর
মাঝখান দিয়ে শেষ বিকেলের লাল সূর্যটা আবছা দেখা যায়। সেখানে বৃষ্টি ভেজা গাছের
পাতাগুলো নিশ্চুপ হয়ে আছে। গাছের নিচে কচু পাতার মাঝে জমে থাকা পানি তখনো মাটি
ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর। শেষ বিকেলের আলো পাতার মাঝে জমে থাকা পানিকে লাল রঙের আভা
দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই পুতুল প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যকে আর অবাক চোখে চেয়ে দেখতে
পারবেনা। কেননা আর একটু পরেই সন্ধ্যা তার নতুন রূপ নিয়ে পুতুলের সামনে এসে হাজির
হবে। কিন্তু সন্ধ্যার এই রূপ পুতুলের মত পাঁচ কিংবা ছয় বছরের একটি মেয়ের কাছে
শুধুই অন্ধকার, যে অন্ধকারকে সে ভয় পায়।
প্রতিদিন বিকেল বেলায় সন্ধ্যা না
নামতেই সে তার ছোট্ট ভাইটিকে ডেকে ডেকে ঘরে ঢুকায়। কিন্তু আজ বাবলা গাছের ডালে
বাঁধা সেই দোলনাটা খালি পরে আছে। মৃদু বাতাসের বেগে বার বার দোল খাচ্ছে। মেঘের
কান্না দোলনার ছোট্ট কাঠের তক্তাটা একেবারেই ভিজিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু যে এই দোলনায়
দোল খেত সে মহাকালের অজানা পথে হাড়িয়ে গেছে। তাই ছোট্ট ভাইকে না পেয়ে পুতুলের মন
খারাপ। প্রতিদিনই তার মা তাকে সান্ত্বনা দেয় যে তার লক্ষ্মী সেই ভাইটি আবার এসে
তার সাথে খেলা করবে। কিন্তু তা যে আর কখনোই সম্ভব না সেটাতো পুতুল বোঝেনা।
সূর্য পুতুলকে এতোটুকুও ছাড় দিতে
প্রস্তুত নয়। সে তার সঠিক নিয়মেই পুতুলের ছোট্ট ভাইটিকে খুজে পাবার সুযোগ না দিয়েই
অস্ত যায়। পুতুলের এ্যাবনরমাল ফুপুটা অজানা ভাষায় আওয়াজ তুলে ওকে ঘরে আসতে ডাকে।
পুতুল তার ডাকে সারা দেয়।
পুতুল পুকুর পার থেকে ফিরে আসলেও
পুতুলের বাবা, ওর
মায়ের তাড়নায় পুকুর পাড়ে যায় বল্লম হাতে করে। গত কয়েকদিন ধরেই এই এলাকায় মেছো
বাঘের আনাগোনা। পুতুলের মায়ের ভাষ্যমতে তাদের পুকুরের মাছ এই বাঘগুলোর পেটেই
যাচ্ছে। গ্রামের অনেকেই মাছ রক্ষায় পাহাড়া বসিয়েছে। পুতুলের বাবা বাঘ মারতে যাওয়ায়
পুতুলের অবুঝ মন আনন্দে নেচে উঠে।
দুই
সুন্দরবন ঘেরা পুতুলদের এই গ্রামটিতে
যেখানে রাত
আটটা বাজতেই সবাই ঘুমিয়ে পরে, সেখানে আজ রাত দশটাতেও পুতুলদের বাড়িতে লোকজনের
জটলা। সবাই পুতুলের বাবার প্রশংসায় পঞ্চমুখ কারণ ওর বাবা আজ এই গ্রামে প্রথম
এয়াকাই একটা মেছোবাঘ মেরেছে। পুতুলের
প্রথম খুব আনন্দ হলেও বাঘটির ক্ষুধার তাড়নায় একটু খাবারের আকুতি মেশানো মায়া ভরা
চোখ দুটি দেখে তার মায়া হয়। তাই সে সবার সাথে আনন্দ না করে মন খারাপ করে ঘুমিয়ে
পরে।
পরদিন সকালটা তার খুব খারাপ কাটে। তার বাবা সেই
মাদী মেছোবাঘটিকে টেনে হেঁচড়ে পাশের ঝোপে ফেলে দিয়ে আসে। পুতুলের সেটা ভাল লাগেনা।
সে মুখ গোমরা করে তার পুতুল খেলার ছোট্ট ঘরটিতে চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষন বসে
থাকার পর তার মা তাকে খাবার জন্য ডাকে। সে কোন উত্তর দেয়না। তার মা তাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে
ব্যর্থ হয়। পুতুলের মা চলে যাবার পরেই সে তার খুব কাছাকাছি জায়গা থেকে বিড়ালের মিউ
মিউ ডাক শুনতে পায়। কিন্তু এই ডাকটা বিড়ালের ডাক থেকে একটু কর্কশ। পুতুল এদিক ওদিক
চেয়ে বিড়ালকে খুজে পায়না। ঘর থেকে বাইরে এসে সে খুজে পায় ডাকটি কোথা থেকে আসছে।
তার বাবা মেছো বাঘটিকে যেখানে ফেলেছিল ঠিক সেই জায়গা থেকেই আওয়াজ আসছে। পুতুলের
মনটা আনন্দে নেচে উঠে, সে ভাবে তার বাবার বেধোরক পেটুনির পরেও হয়ত বাঘটি বেঁচে
গেছে। আবার ভাবে বাঘ কি বিড়ালের মত ডাকে! পুতুল উৎসাহ না ঠেকাতে পেরে সেখানে যায়।
পা টিপে টিপে ঝোপের এক পাশ ফাকা করে সে দেখে সত্যিই সে বাঘটি মিউ মিউ করে ডাকছে।
কিন্তু এ বাঘটা এত ছোট কেন সে তা বোঝেনা। একটুখেয়াল করে দেখে ছোট এই বাঘটির পাশে
তার বাবার মেরে ফেলা বাঘটি পরে আছে। পুতুল বুঝতে পারে ছোটটি হয়ত বড়টির বাচ্চা।
পুতুল মায়ের জাত, তার এই বাঘ শাবকটির প্রতি মায়া জম্মাতে একটুকূও সময় লাগেনা।
একেবারেই দুধের বাচ্চা হওয়ায় এটি প্রায়
বিড়ালের মত দেখতে। পুতুল একবার মনে করে দৌড়ে যেয়ে সে তার বাবাকে এ খবরটা দেবে। যেতে যেতে আবার
চিন্তা করে তার বাবা যদি এই বাঘটিকেও মেরে ফেলে। তাই ফিরে আসে। আর বাঘটির দিকে দুই
হাত বাড়িয়ে বলে, “
ম্যাও, এই দিকে আয়, আমি আমার আব্বুর মত দুষ্ট না। সত্যি তোকে মারবনা”। বাঘটি আরও
ভয় পেয়ে পিছনে সরে যায়। কিন্তু পুতুল জানে কিভাবে বিড়াল বশ করতে হয়। সে দৌড়ে
বাড়িতে যেয়ে খাবার নিয়ে আসে। এসে দেখে বাঘটি তার মায়ের স্তনে মুখ দিয়ে আছে, কয়েক
সেকেন্ড পরেই মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে সে তার মাথা তুলে মিউ মিউ করে ডাকতে থাকে।
পুতুল ভাবে এ বাঘের বাচ্চাটিও তার হাড়িয়ে যাওয়া ছোট্ট ভাইটির মত দুষ্টু আর
একেবারেই লজ্জা নেই। খালি খালি মায়ের বুকের দুধ খেতে চায়।
পুতুল তার হাতের খাবারটা বাঘ শাবকটির
দিকে ছুড়ে মারে, বাঘটি ভয় পেয়ে পেছনে সরে যায়। পুতুল মনে করে সে বুঝি এই খাবার
গুলো পছন্দ করেনি। তাই দৌড়ে বাড়িতে যেয়ে ভাইয়াকে খাওয়ানো ছোট ফিটারটা দিয়ে অল্প
দুধ নিয়ে আসে। এসে দেখে বাঘ শাবকটি ঝোপের বাইরে বেড়িয়ে এসেছে। পুতুল মনে করে,
খাবারগুলো শেষ করেই সে এখানে এসেছে। পুতুলের উৎসাহ দিগুণ হয়ে। সে তার ফিটারটি এগিয়ে
ধরে তার হাড়িয়ে যাওয়া ছোট ভাইটির নাম ধরে বাঘটিকে ডাকতে থাকে, “শান্ত…… শান্ত...... এই দিকে আয়, দুদু খেয়ে
যা”। পুতুল যত সামনে এগোয় শান্ত তত পিছনে যায়। কিন্তু গত দুই দিনের না খাওয়া
দুর্বল এই মেছোবাঘ শাবকটি পুতুলের কাছে কিছুক্ষনের মধ্যেই ধরা দেয়। পুতুল জোর করে
সেটির মুখে ফিটারটি গুজে দেয়। প্রথমে বেশ কিছুক্ষন ছুটে পালাবার জন্য পুতুলের সাথে
ধস্তাধস্তি করে হয়রান হলে সেটি ঠান্ডা হয়। তারপর আশ্চর্য হলেও সত্যি, সে মেছোবাঘ
শাবকটি চুক্ চুক্ করে শব্দ করে ফিটারের সবটুকু দুধই সাবাড় করে। পুতুলের আনন্দ আর
ধরেনা। তার নিষ্পাপ মন যেন হাড়ানো শান্তকে খুজে পেল।
এরপর থেকেই শুরু হয় পুতুল ও মেছোবাঘের
গল্প। পুতুল সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে নতুন শান্তর জন্য খাবার নিয়ে আসত, আর
শান্ত পুতুলের অবস্থান টের পেলেই ঝোপ থেকে বের হয়ে মিউ মিউ করে নিজের অবস্থান
জানান দিত। শান্ত যখন খেত তখন পুতুল তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিত ঠিক যেভাবে সে তার
ভাইকে হাত বুলাত। আদর পেয়ে শান্ত আরও শান্ত হয়ে গুটিসুটি মেরে পুতুলের পায়ের কাছে
এসে বসত। পুতুল তখন শান্তকে বলত, “ঢং করার আর জায়গা পাসনা, তাই নারে শান্ত”। অবুঝ
প্রাণী, কি করবে? মা থেকেও নেই। মায়ের পচা শরীরটা মাটি ও পোকামাকড়ে আস্তে আস্তে
গ্রাস করছে। তাই ছোট্ট পুতুলের কাছে সামান্য মায়ের আদর পেয়ে শান্ত আরও শান্ত হয়ে
যায়। তাই সে নির্বিগ্নে পুতুলের ছোট বড় লাথি আর কিল সহ্য করতে লাগলো। সময় যত গড়াতে থাকে পুতুল ও মেছোবাঘের
সম্পর্কটা আরও গভীর হতে থাকে কিন্তু সেটা আর গোপন থাকেনা। পৃথিবীতে কেউ মায়ের কাছে
কিছু গোপন করতে পারেনি, ছোট্ট মেয়ে পুতুলও পারলনা তার মায়ের কাছে ‘পুতুল ও
মেছোবাঘের গল্প’ গোপন করতে।
প্রথম প্রথম পুতুলের মা ব্যপারটাকে
ভালো চোখে দেখেননি। পরে পুতুলের নাছোড়বান্দা অবস্থা দেখে ব্যাপারটা মেনে নেন।
কিন্তু বাঘটিকে শান্ত বলে ডাকায় তার মনে কষ্ট হত। অন্যদিকে নতুন শান্তকে পেয়ে
পুতুল তার ভাই শান্তকে ফিরে পাওয়ার জন্য যে আবদার প্রতিদিন করত তা বন্ধ করে দিল।
প্রতিদিনের অযথা কান্না বন্ধ হওয়ায় পুতুলের মা তা মেনে নিল। তবে সমস্ত ব্যাপারটি
পুতুলের বাবার দৃষ্টি এড়ায়। সে এই সময়টায় বাড়িতে ছিলনা।
তিন
একদিন দুপুর বেলায় প্রচন্ড বৃষ্টি
হচ্ছিল। পুতুল অনেক চেষ্টা করেও শান্তকে রাখার কোন স্থান খুজে পাচ্ছিলনা। পেছনে
তার মা তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে বারবার মানা করছিল। কিন্তু পুতুল তার শান্তকে ভিজতে
দিতেই পারেনা। পুতুলের মা শান্তকে জঙ্গলে ফেলে আসার কথা বললে পুতুল কেঁদে কেঁদে
বলে, “মা তুমি এত পচা কেন? আব্বুর মত তুমিও কি বাঘ মারতে চাও? তুমি আমার ভাইয়াকে
ফেরত দিবে বলেছিলে, তুমি তাকে কোথায় ফেলে দিয়েছ? মা তুমি কি শান্তকেও মেরে ফেলতে চাও? ”। অবশেষে পুতুলের মা মেয়ের সুস্থতার কথা চিন্তা
করে শান্তকে ঘরে রাখার অনুমতি দিলেন।
পুতুল সুযোগ পেয়ে শান্তর শরীরের পানি
ভাল মত মুছে তার বিছানায় অন্য একটি বিছানা করে শুতে দিল। কিন্তু শান্ত তাতেও শান্ত
হচ্ছিলনা। শুধু মিউ মিউ করছিল। হাজার হোক সেও তো বাঙ্গালি। খালি শুতে দিলে হবেনা, খেতেও দিতে হবে। পুতুল
তার ব্যপারটা বুঝতে পেরে তার আবদারটা পুরোপুরি মেটাল। তারপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া
সেরে সে নিজেও শান্তর পাশে ঘুমিয়ে পড়ল। শান্ত পুতুলের অস্তিত্ব টের পেয়ে আরও কাছে
ঘেঁষে শুতে চাইল। বৃষ্টিতে ভেজা শরীরে তারও কাঁথার নিচে শোয়া চাই। তাই বেড়ালের মত
পুতুলের পাশে নিজের জায়গা খুজে নিল। শান্তর রোমশ শরীর পুতুলের গায়ে লাগতেই পুতুলের
সুড়সুড়ি লাগল। সেও বুঝে গেল শান্ত তার কাঁথার ভাগ চাইছে। তাই সে বলল, “তুই তো ভারি
দুষ্টরে শান্ত, খালি আমাকে কাতুকুতু দেস্”। পুতুল আস্তে আস্তে শান্ত গায়ে দুটো কিল
কসাল। বরাবরের মতই শান্ত তা সহ্য করল।
অতঃপর পুতুল শান্তকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাল, ঠিক যেভাবে সে তার ভাইটিকে নিয়ে
ঘুমাত।
সেদিন বিকেল বেলাতেই পুতুলের বাবা এসে
হাজির। ঘটনাক্রমেই সে মেছোবাঘটার কথা জানতনা। সে যখন পুতুলকে আদর করতে আসলেন। তখন
আন্ধকারে তার হাত রোমশ কিছুর উপরে পড়ল। স্বাভাবিক ভাবেই তার ভয় পাওয়ার কথা। সে
পুতুলের মাকে ডাকতে ডাকতেই একটা মোটা লাঠি দিয়ে শান্তর শরীরের উপরে মারল। আচমকা
আঘাত পেয়ে শান্ত ম্যাও ম্যাও করে আওয়াজ তুলে দরজা দিয়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে বাড়ির বাইরে
চলে গেল। পুতুল আচমকা শান্তর আওয়াজ পেয়ে
ঘুম থেকে জেগে গেল। চোখ খুলতেই সে তার বাবার হাতে লাঠি দেখল। তার আর বুঝতে বাকি
রইলনা কি ঘটেছে। পুতুল কাঁদতে কাঁদতে ‘শান্ত’ ‘শান্ত’ করে চিৎকার করতে করতে বাইরে
বেড়িয়ে এল। তারপর প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শান্তকে খুজতে বের হল। বাবলা গাছের
তলায়, কচু গাছের ঝোপে কিংবা তার পুতুল খেলার ঘরে কোথাও সে শান্তকে খুজে পেলনা।
অবশেষে তাদের বাড়ির বাগানের কোনায় জঙ্গলের ভিতরে শান্তকে খুজে পেল। সে তার পচে গলে
যাওয়া মায়ের কাছেই শেষ আশ্রয় খুজতে এসেছে। আঘতের তাড়নায় অস্ফুট স্বরে কোকাচ্ছে।
পুতুলের ডাকে শান্ত সারা না দিলে পুতুল অতি উৎসাহি হয়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকল। কিন্তু
পা পিছলে পাশের ডোবায় পরে যেতে লাগল। পুতুল পরেই যেত কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সে
ডোবার খাদে ঝুলে রইল। কারণ শান্ত তাকে পেছন
থেকে কামড়ে ধরে তার চার পায়ের নখ দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরে ছিল। এ ঘটনাটা পুতুলের সে
এ্যাবনরমাল ফুপু দেখতে পেয়েছিল। সে এটা দেখে প্রচন্ড খুশিতে চিৎকার করতে লাগলো।
পেছনে পুতুলের বাবা মেয়ের পিছু পিছু
দৌড়ে এসেছেন। সে তার মেয়ের সাথে বাঘের ব্যাপারটি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলনা।
জঙ্গলের কাছে আসতেই মেয়ের এ অবস্থা দেখে সে মনে করল বাঘটা বুঝি পুতুলের শরীর কামড়ে
ধরেছে। তাই মেয়েকে বাঁচাতে হাতে থাকা লাঠিটা দিয়ে শান্তর গায়ে প্রচন্ড আঘাত করল।
আঘাত পেয়ে শান্ত পুতুলকে ছেড়ে দিয়ে আস্তে করে কাত হয়ে পরে গেল। পুতুলের শান্ত
পুতুলের দিকে চেয়ে থেকে শুধু একবার মিউ করে আওয়াজ করল। তারপর তার নাক মুখ দিয়ে
অঝোরে রক্ত ঝড়তে লাগলো। ততক্ষনে পুতুলের বাবা পুতুলকে উঠিয়ে এনেছেন। পুতুল তার
বাবার কোল থেকে হাত পা ঝাড়া দিতে লাগলো। সে শান্ত শান্ত করে চিৎকার করতে করতে বাড়ি
মাথায় তুলল। তার মা তাকে বারবার বোঝাতে লাগলো, সে আবার তাকে জঙ্গল থেকে শান্তকে
ধরে নিয়ে আসবে। কিন্তু পুতুলের একই কথা, সে তার ভাইয়াকে ফেরত দেয়নি, এবার শান্তকেও
ফেরত আনবেনা। অন্যদিকে ততক্ষনে শান্ত তার মায়ের মরা লাশের স্থানটিতেই চির নিদ্রায়
শায়িত হয়েছে। সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নামে কিন্তু পুতুলের কান্না থামেনা। সে তার
বাবাকে কিছুতেই তার পাশে ঘিষতে দিলনা।
এ ঘটনার পর থেকে পুতুল সুযোগ পেলেই
শান্তর মরা লাশের পাশে যেয়ে বসে থাকত। তার মা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেত। একদিন সুযোগ
বুঝে পুতুল শান্তর খুব কাছা কাছি চলে আসল। সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল তাই মাটি
পিচ্ছিল ছিল। অসাবধানতা বশত পুতুল পা পিছলে জঙ্গলের পাশের ডোবায় পরে গেল। আজ আর
শান্ত নেই, তাকে কে কামড়ে ধরে রক্ষা করবে। তাই শান্তর পাশেই পুতুলের সলিল সমাধি
হল। বরাবরের মত পুতলের এ ঘটনাটা তার সে
এ্যাবনরমাল ফুপু দেখতে পেয়েছিল। সে চিৎকার চেঁচামেচি করেও কাউকে সেখানে নিয়ে আসতে
পারলনা।
চার
পুকুর পাড়ের বাবলা গাছের মাঝদিয়ে
সুর্যটা আবছা এখনও দেখা যায়। কিন্তু গাছের পাতাগুলো শুকনো, কচু পাতার মাঝে জমে
থাকা পানি আর নেই। কিন্তু সূর্য তার নিয়ম মাফিক কাজ করে যাচ্ছে। আর সন্ধ্যা নামলেই
লোকেরা লাঠিসেটা নিয়ে বের হবে মেছোবাঘ মারতে।
পরিশিষ্টঃ
গল্পে পুতুল আমাদের ভবিষৎ প্রজম্ম আর
পুতুলের বাবা হলাম আমরা যারা নির্বিচারে বাঘ মেরে পুতুলের মত আমাদের ভবিষৎ
প্রজম্মকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। পুতুলের এ্যাবনরমাল ফুপু আমাদের মত নির্জিব
দর্শক যার কথার কোন দাম নেই, শুধুই চেঁচামেচি।
কোন এক বাঘ দিবস উপলক্ষ্যে লেখা
কোন এক বাঘ দিবস উপলক্ষ্যে লেখা