This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

This blog is about Bangle Ghost, Horror, Funny and fantasy story.

পিঁপড়া বিদ্যা


পট্ট চার বছর বয়সী ছোট্ট একটি ছেলের নাম। মাস কয়েক আগেই সে বুঝতে শিখেছে কিভাবে তার চারপাশের প্রাণী কিংবা বস্তুর সাথে খেলা করতে হয়। বাসায় তার সাথে খেলবার মত বাচ্চা বয়সী কেউ নেই। তার উপরে প্রায় প্রতিদিনই তার বাবা মা ঝগড়া করে। বাবা প্রায়ই মাকে ধরে পেটা। তাই এই সময়টাকে পট্ট ভয় পেত। প্রথম প্রথম সে মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করত। তার আবদার কাজেও দিত। কিন্তু এখন আর সে আবদারে কোন কাজ হয়না। কারণ বাবা আগের মত তাকে আর ভালবাসে না।  তাই সে এই বিরক্তিকর সময়টুকু বারান্দায় বসে কাটাতো। কিন্তু সময় কাটাতে কিছু একটা তো করা চাই। তার কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে সে নিজের অজান্তেই বেশ কিছু খেলা আবিষ্কার করে ফেলেছিল। এই যেমন বারান্দায় উড়ে এসে বসা ছোট ছোট ঘাস ফড়িং এর পেছনে ছোটা, মাছি আটকানো, পিঁপড়ের সাথে খেলা করা ইত্যাদি।

 প্রায় দিনগুলোর মত সেদিনো তার বাবা মায়ের ঝগড়া হচ্ছিল। আর অন্যদিকে পট্ট সময় কাটাতে  পিঁপড়েদের সাথে মজেছিল। পট্ট নিজেও জানতোনা, যে পিঁপড়েগুলোর সাথে সে খেলা করছিল সে পিঁপড়েগুলোর তার মতই সুন্দর সুন্দর নাম আছে। ওর আসেপাশে যে পিঁপড়েগুলো ছিল তারা নিজেরা নিজেদের শিবু পিঁপড়া, কানাই পিঁপড়া, আদল পিঁপড়া নামে ডাকত। সে সময় ছিল প্রায় শীতকাল। পিঁপড়েদের খাদ্য যোগাড়ে লেগে যেতে হত যখন তখনই। কিন্তু দালান বাড়িতে খাবার যোগাড় করা কষ্টের ব্যপার। এখানে পোকামাকড় খুব একটা পাওয়া যায়না বললেই চলে। খাবারের আশায় মানুষের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। আজ শিবু, কানাই আর আদল নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছিল। কারন তাদের নাকে খাবারের গন্ধ আসছিল। কিন্তু সে খাবার তাদের নাগালের বাইরে। তাদের পাশে বসে থাকা মস্ত বড় মানুষ দৈত্যটির হাতেই খাবার। সুতরাং অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায়। বেশ কিছুক্ষণ পরে অপেক্ষার পালা শেষ হল। পট্টর হাত থেকে সামান্য খাবার নিচে পড়ল। পিঁপড়েদের কাছে সেটা সামান্য ছিলনা। তাদের কাছে পাহাড়সম মনে হল সেটুকু খাবারকে। তিন জনে অনেক কষ্ট করেও এক চুলও নড়াতে পারলনা। অগ্যতা সলাপরামর্শ করে কানাই পিঁপড়েকে বাসায় পাঠানো হল অন্যদের ডেকে আনবার জন্য। 



পট্ট লক্ষ্য করল সামান্য সময়ের মধ্যেই বেশ কিছু পিঁপড়া সেখানে হাজির হল। খেলা জমে গেছে তাই সে খাবারের অংশটা সেখান থেকে সরালো না। প্রথমে পিঁপড়ারা একযোগে সে খাবারটা তাদের বাসার কাছে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল। সামান্য সময়ের মধ্যেই তারা বাসার প্রায় কাছাকাছি খাবার নিয়ে আসল। এবার ভেতরে ঢুকবার পালা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াল পট্ট। তার খেলা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে সে আবার খাবারটা টেনে নিজের কাছে নিয়ে এল। পিঁপড়েরা খুঁজতে খুঁজতে আবার সেই খাবার পেয়ে গেল।  খাবার পেয়েই আবার নিজেদের লক্ষ্যে নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা। তবে এমন প্রচেষ্টা তাদের বেশ কয়েক বারই করতে হল। কারণ পট্ট বেশ বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল। শিবু, কানাই আর আদল বেশ রাগান্বিত এই কারণে। কিন্তু পট্ট তাদের কষ্ট বুঝবে কেন। সে তো বেশ আনন্দই পাচ্ছে। এমন নিরানন্দ সময়ে আনন্দের মাধ্যম হয়ে এসেছে পিঁপড়েরা।

 বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর পিঁপড়েরা নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করল। এবারে তারা খাবারটিকে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করে নিজেরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে নিজেদের বাসার দিকে যেতে থাকল। সে এক দলকে থামায় তো আরেক দল খবার নিয়ে বাসার ভেতরে চলে যায়। এ অবস্থা দেখে পট্ট বেশ বিচলিত হয়ে পড়ল।  কয়েক টুকরো খাবার ভেতরে চলে যাবার পর পট্ট বুঝতে পাড়ল এরা তার সাথে চালাকি করছে। সে সেটা বোঝা মাত্রই পিঁপড়েদের বাসার মুখের উপরে হাত দিয়ে পুরো মুখটাই বন্ধ করে দিল। দুর্ভাগ্যক্রমে সে সময়তেই শিবু, আদল আর কানাই পিঁপড়া নিজেদের অংশ নিয়ে ভেতরে ঢুকছিল। পট্টের হাতের তলায় শিবুর শরীরের অর্ধেক চাপা পড়েছে। সে চিৎকার করছে। কিন্তু তার কান্নার আওয়াজ পট্টের কানে পৌছুচ্ছিল না। আদল আর কানাইয়েরও ভেতরে যাবার দরজা বন্ধ। সাথী পিঁপড়া মারা যায় যায় অবস্থা। কি করবে এখন তারা? দুজনে পরামর্শ করে সেটার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কানাই আর আদল পিঁপড়া নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে কামড়ে ধরল পট্টর হাতটিতে। হঠাৎ এমন কামড় খেয়ে পট্ট তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে ফেলল। আর শিবু মুক্তি পেতেই ওর দল খাবার নিয়ে ভেতরে চলে গেল। কিন্তু পিঁপড়ের কামড় খেয়ে পট্ট আর সহ্য করতে পারছিলনা। সে কাঁদতে কাঁদতে বাবা মায়ের কাছে গেল। কিন্তু তার কথা যে শোনার ছিল সে ততক্ষণে অসম যুদ্ধে ধরাশায়ী। পট্টের বাবা তাকে মারবার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। তার মা মারের ভয়ে আগেই চিৎকার শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু সে চিৎকার পট্টের বাবার কানে পৌছাচ্ছিলনা। পট্ট কি করবে এখন? সেও পিঁপড়েদের মত কয়েক সেকেন্ড সময় নিল সিদ্ধান্ত নিতে। পিঁপড়া বিদ্যা কাজে লাগিয়ে সে তার বাবার হাতে প্রচণ্ড কামড় বসাল। হঠাৎ কামড় খেয়ে পট্টের বাবা বেশ চমকে গেল। যখন বুঝতে পাড়ল এই কাজ পট্ট করেছে, তখন তার সমস্ত রাগ যেয়ে পড়ল পট্টের উপড়ে। পট্টও তার বাবার অগ্নি মূর্তি দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেল। সে কাঁদো কাঁদো হয়ে তার হাত দুটো দেখিয়ে বলল, “আব্বু, বারান্দার পিঁপড়েরা আমার হাতে কামড়ে দিয়েছে”। এতেই রাগ কমল বদমেজাজী লোকটার। আর পিঁপড়া বিদ্যার জোরে মুক্তি মিলল অসহায় মেয়ে মানুষটির।     


Share:

কোন মন্তব্য নেই:

পৃষ্ঠাসমূহ

Popular

Translate

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

Like Us